বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
সকল প্রশংসা আল্লাহ্ তা’আলার জন্য এবং সালাম ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর।
আমরা যারা নিয়মিত সালাত আদায় করার চেষ্টা করি, আমাদের সবগুলো সালাত ঠিক থাকলেও ‘ফজরের সালাত’ নিয়ে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয়। অনেকেই অনেক চেষ্টা করেও পারি না ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠতে। কীভাবে করা যায় এ সমস্যার সমাধান? আমি শুধু দু’ একদিনের কথা বলছি না, বলছি প্রতিদিনকার কথা। আসুন জেনে নেই এ ব্যাপারে কিছু কার্যকরী কৌশল।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
আমরা যখন প্রতিদিন সূরা আল-ফাতিহা তিলাওয়াত করি, দিনে কমপক্ষে ১৭ বার, আমরা এই আয়াতটিও তিলাওয়াত করিঃ
“আমরা একমাত্র তোমারি ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারি সাহায্য প্রার্থনা করি।”[সূরা আল-ফাতিহাঃ ০৫]
আমরা কি সত্যিই আল্লাহর ইবাদত করতে চাই? “অবশ্যই!” তাহলে আল্লাহর সাহায্যও চাই? “হুম!” আবার ফজরের সালাতের জন্যও জেগে উঠতে চাই? “জ্বী, ভাই!” কিন্তু তারপরও আমরা পারি না কেন? কারণ, আমাদের চাওয়ায় আন্তরিকতার অভাব।
আপনার কি কখনও ঘুমাতে যাওয়ার মুহূর্তে এমন অনুভূতি হয়েছে যে, আপনি অবশ্যই ফজরের সালাতের জন্য উঠবেন কিংবা আগে থেকেই আপনি জানতেন সেদিন বেশি ঘুমাবেন? নিচের দৃশ্যপট দুটি কল্পনা করার চেষ্টা করুন। আমি মনে করি, আমরা প্রায় সকলেই এই ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হয়েছি।
দৃশ্যপটঃ ১
আপনার হৃদয় ঈমানে পরিপূর্ণ, আপনি বিতির পড়েছেন, কিছুটা কুর’আন তিলাওয়াত-ও করেছেন এবং যদিও আপনার হাতে ফজর পর্যন্ত ঘুমানোর জন্য মাত্র দু’ ঘণ্টা সময় আছে, তারপরও জেগে উঠার ব্যাপারে আপনি নিশ্চিত। কারণ, আপনি আপনার মন, হৃদয় ও দেহকে প্রস্তুত করে নিয়েছেন। এমনকি মাঝে মাঝে ওয়াক্ত পার হয়ে গিয়ে সালাত মিস করার ভয়ে মাঝ রাতেও ঘুম থেকে জেগে উঠেছেন। যদি আপনি এ ধরনের কোন ঘটনার সম্মুখীন না হয়ে থাকেন, তবে এমন সময়ের কথা ভাবুন যেদিন আপনাকে খুব ভোরে বাস কিংবা ট্রেন ধরতে হয়েছিল। আর ভাবুন, কীভাবে আপনার মন, হৃদয় ও দেহ সজাগ ছিল। হয়তো অনেক দেরিতে ঘুমিয়েও জেগে উঠেছিলেন বাস কিংবা ট্রেনের জন্য।
দৃশ্যপটঃ ২
আপনার জীবনে হয়তো এমন অনেক দিন আছে যেগুলোতে আপনি প্রকৃতপক্ষেই বেশি ঘুমাতে চান। যার জন্য আপনি আগে থেকেই ‘অতিরিক্ত ঘুমানোর’ পরিকল্পনা করেন। তারপরও আপনি জেগে উঠেছেন, আর তখনই শুরু হয়েছে ‘Snooze Alarm’ এর সাথে যুদ্ধ এবং আধুনিক শয়তানের কৌশল, “আর মাত্র পাঁচ মিনিট…” এই দুটি দৃশ্যপটের মধ্যে একটি দৃশ্যপট বর্ণনা করে ‘আপনি অবশ্যই ঘুম থেকে জেগে উঠবেন’ আপনার এ ধরনের গভীর মানসিকতার কথা, আর অন্য দৃশ্যপটটি বর্ণনা করে ‘আপনি ঘুম থেকে উঠতে পারবেন না’ এ ধরনের মানসিকতার কথা। কারণ, আপনার অন্তর এটা চায় না, আর আপনিও শয়তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠার চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত নন। নিচে আমি কিছু কৌশলের কথা বর্ণনা করছি যেগুলো আপনাকে সব সময় দৃশ্যপটঃ ১ এর মত সফলতা অর্জনে সাহায্য করবে , ইনশা আল্লাহ্।
আধ্যাত্মিক কৌশল
১. আল্লাহকে চেনাঃ এটা ফজরের সালাতের জন্য জেগে উঠার চাবিকাঠি এবং এক নম্বর কৌশল। আপনি যদি জানেন আপনি কার ইবাদত করছেন, আর এ-ও জানেন যে, তিনি চান আপনি প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে তাঁর ইবাদত করুন, তাহলে আপনি জেগে উঠবেনই! ‘আল্লাহ্’ কে- এ ব্যাপারে আমাদের জ্ঞানের কমতিই আমাদেরকে দৃশ্যপটঃ ২ এর দিকে ধাবিত করে। তাই আপনার প্রভুকে জানুন, আর এটাই আপনার চাবিকাঠি।
২. আন্তরিকতাঃ ফজরের সালাতের জন্য জেগে উঠার ব্যাপারে আন্তরিক হওন। নিজেকে শুধু এটুকু বলবেন না যে, ‘যদি আমি ফজরের ওয়াক্তে উঠতে পারি তবে ভালো হবে’, বরং আন্তরিকতার সাথে বলুন, ‘আমি ফজরের ওয়াক্তে জেগে উঠবোই ইনশা আল্লাহ্!’
৩. ঘুমাতে যাওয়ার আগে উযূ করাঃ Ibn Abbas reported that Allah’s Messenger said: “Purify these bodies and Allah will purify you, for there is no slave who goes to sleep in a state of purity but an Angel spends the night with him, and every time he turns over, [the Angel] says, ‘O Allah! Forgive Your slave, for he went to bed in a state of purity. আপনি কি মনে করেন এ ধরনের একজন মানুষ অতিরিক্ত ঘুমাবে আর ফজরের সালাত মিস করবে?
৪. বিতিরের সালাত ও দু’আঃ বিতিরের সালাত আদায় না করে ঘুমাবেন না, আর বিতিরের সালাত আদায়ের সময়
আল্লাহর কাছে অনুনয়-বিনয় করুন যাতে তিনি আপনাকে ঘুম থেকে জেগে উঠতে সাহায্য করেন।
৫. সামান্য কুর’আন তিলাওয়াত করুনঃ মহা গ্রন্থ আল-কুর’আনের মাধ্যমে দিনের সমাপ্তি অবশ্যই আপনার মনোযোগকে ফজরের সালাতের জন্য জেগে উঠার দিকে নিবন্ধিত করবে। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুমাতে যাওয়ার আগে সূরা আল-সাজদাহ ও সূরা আল-মূলক (৩২ ও ৬৭ নম্বর সূরা) তিলাওয়াত করার পরামর্শ দিতেন।
৬. ঘুমাতে যাওয়ার আগে আল্লাহকে স্মরণ করুনঃ এটা আমার বর্ণনাকৃত প্রথম পয়েন্টেরই অংশ। আর এখানেই আপনি আপনার সকল অনুনয়-বিনয় আল্লাহর কাছে জানাবেন। প্রথম প্রথম দু’আগুলো পড়ার জন্য আপনি ছাপিয়ে নিতে পারেন কিংবা দু’আর বই ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু এক বা দু’ সপ্তাহের মধ্যেই দু’আগুলো আপনার মুখস্থ হয়ে যাবে
ইনশা আল্লাহ। আর ঠিক ঘুমিয়ে পড়ার আগেই সেগুলো নিয়মিত পড়বেন।
৭. ফজরের সালাত আদায়কারীদের জন্য ঘোষণাকৃত পুরস্কারগুলোর কথা স্মরণ করুনঃ মুনাফিকের হাত থেকে বেঁচে থাকা, শেষ বিচারের দিন আলোকিত হওয়া, সারাদিন আল্লাহর নিরাপত্তায় থাকা, জীবন থেকে অলসতা কেটে যাওয়া, কর্মঠ হওয়া- এই পুরস্কারগুলোর কথা স্মরণ করুন, ইনশা আল্লাহ আপনি জেগে উঠতে পারবেন।
এছাড়া অন্যান্য যে সব কৌশল আপনাকে ফজরের সালাতের জন্য জেগে উঠতে সাহায্য করবে, সেগুলো হলঃ
* জাগিয়ে দেয়ার জন্য বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের বলাঃ পরিবারের অন্যান্য সদস্য কিংবা বন্ধুদের বলুন আপনাকে জাগিয়ে দিতে। আর পরস্পরকে সাহায্য করুন। যদি আপনি আগে জেগে উঠেন তবে স্বার্থপর না হয়ে অন্যদেরও জাগিয়ে তুলুন।
* দেড় (১.৫) ঘন্টা ঘুমানোর নিয়মঃ একটি গোপন কৌশল জানিয়ে দিচ্ছি, ঘুম বিজ্ঞানে একটি তত্ত্ব আছে যাতে বলা
হয়েছে, প্রত্যেক মানুষ তার ঘুমের একটি পূর্ণ চক্র সম্পন্ন করে দেড় ঘন্টায়। কাজেই আপনি যদি দেড় (১.৫ ঘন্টা) এর গুণীতকে (যেমনঃ ১.৫ ঘন্টা, ৩ ঘন্টা কিংবা ৪.৫ ঘন্টা ইত্যাদি) জেগে উঠতে পারেন, তবে আপনি থাকবেন সতেজ ও
পুনরিজ্জ্বীবিত। তা নাহলে আপনার মাঝে আলসেমি থেকে যাবে। তাই ফজরের সালাত যদি ভোর পাঁচটায় হয়, আর আপনি বারোটা বাজে ঘুমান, তবে অবশ্যই আপনার এলার্ম সাড়ে চারটায় দিন। কারণ, এতে আপনি সাড়ে চার ঘন্টা ঘুমাতে পারবেন (অবশ্য ঘুম আসতে আপনার যদি সময়ের প্রয়োজন হয় তবে তা যোগ-বিয়গ করে নিবেন)।
* দুপুরে সামান্য ভাত ঘুম দিনঃ আরেকটি কৌশল, যা নেয়া হয়েছে সুন্নাহ ও অনেকের পরামর্শ থেকে, আর তা হল দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর সামান্য ভাত ঘুম দেয়া। মাত্র আধ ঘন্টার ঘুমই আপনাকে করে তুলবে উজ্জীবিত।
কৌশলগুলো মেনে চলার চেষ্টা করুন, ইনশা আল্লাহ আপনি সফল হবেনই। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হিদায়াত দান করুক এবং সঠিকভাবে দ্বীনকে বোঝার ও মানার তৌফিক দান করুক। আমীন।
0 comments :
Post a Comment