দাড়ী আল্লাহর একটি মহান ও বড় নে’য়ামত। দাড়ী দ্বারা তিনি পুরুষকে অনুগৃহীত করেছেন এবং নারী জাতি থেকে তাকে বৈশিষ্ট মন্ডিত করেছেন।
দাড়ী শুধুমাত্র মুখমন্ডলের উপর কয়েকটি কেশগুচ্ছই নয়; বরং ইহা ইসলামের বাহ্যিক বড় একটি নিদর্শন। দাড়ী ছেড়ে রেখে এবং তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। আল্লাহ্ বলেন,

ذَلِكَ وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوبِ

“এই কারণে যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শন সমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, এটা তো তার হৃদয়ের তাকওয়ারই পরিচয়।” [ সূরা হাজ্জ- ৩২]


দাড়ী মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর অনুসৃত নীতির একটি অন্যতম পরিচয়। তিনি দাড়ী ছেড়ে দিতে ও লম্বা করতে আদেশ করেছেন।
কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় যে, দাড়ীর প্রতি এত গুরুত্ব ও তার প্রতি সম্মানের নির্দেশ থাকা সত্বেও অধিকাংশ মুসলমান বিষয়টিকে অতি নগন্য ও তুচ্ছ মনে করে। যেন ঘৃণা ভরে প্রতিদিন তা ছেঁচে ফেলতে মহা ব্যস্ত হয়ে পড়ে। যারা মুন্ডন করে না তারা আরেক ষ্টাইলে তার সাথে খেলা-ধুলা করে। কেউ শুধুমাত্র থুতনীর উপর ছোট ছোট করে রাখে আবার কেউ খুবই হালকা করে কাল একটি রেখার মত করে রাখে। কেউ আবার দাড়িকে গোঁফের সাথে মিলিয়ে দিয়ে গোলাকৃতী করে রাখে।
এই চিত্রগুলো দেখলে একদিকে যেমন দুঃখ লাগে অন্য দিকে তা যেন হাস্যেরও পাত্র। যে মুসলমানকে দাড়ী ছেড়ে দিতে আদেশ করা হয়েছে, দাড়ীকে সম্মান করতে বলা হয়েছে সেই মুসলমান তো দূরের কথা কোন বিবেকবানের পক্ষেও এরকম আচরণ করা শোভনীয় নয়। বড়ই পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, আল্লাহ্ তা’আলা যে আকৃতিতে দাড়ীকে সৃষ্টি করেছেন সে অবস্থাতেই তা নিজ মুখমন্ডলে অবশিষ্ট রেখে ইসলামী শিষ্টাচারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনকারী এরকম সভ্য মানুষের সংখ্যা আজ খুবই বিরল। (লা হাউলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্)
মনীষীদের নিকট দাড়ীর মূল্য ও সম্মানঃ
আদম (আঃ) থেকে শুরু করে সমস্ত নবী ও রাসূলের বৈশিষ্ট ছিল দাড়ী রাখা। অনুরূপভাবে ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন ও আইম্মায়ে মুজতাহেদীন সকলেই দাড়ী রেখেছেন। এমন কোন বর্ণনা বা ঘটনা খুঁজে পাওয়া যাবে না যে, তাঁদের মধ্যে কেউ দাড়ী কেটেছেন বা মুন্ডন করেছেন; বরং কারো দাড়ী না গজালে তার জন্য তাঁরা আফসোস করেছেন। সাহাবী ক্বায়স বিন সা’দ (রাঃ) দাড়ী বিহীন লোক ছিলেন। তাঁর সম্প্রদায় আনসাররা বললেন, হায় দাড়ী যদি বাজারে কিনে পাওয়া যেত তবে আমরা তাঁর জন্য দাড়ী কিনে নিতাম।”
প্রখ্যাত তাবেঈ আহনাফ বিন কায়স একজন বিচক্ষণ, বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী লোক ছিলেন। তিনি সৃষ্টিগত দিক থেকে খোঁড়া ও এক চোখ অন্ধ ছিলেন। তাঁর দাড়ীও উঠে নি। অথচ তিনি ছিলেন নিজ গোত্রের নেতা। লোকরা বলল, “বিশ হাজার দীনার খরচ করেও যদি যদি দাড়ী কিনে পাওয়া যেত তবে আমরা তাঁর জন্য তা খরিদ করতাম।” কি আশ্চর্য! লোকেরা তাঁর পা বা চোখের ত্র“টিকে ত্র“টি মনে করল না। কিন্তু তারা দাড়ী না থাকাটাকে অপছন্দ করল। কেননা তাঁরা দাড়ীকে মনে করতেন পৌরুষত্বের পরিচয়, মুসলিমের সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্বের পূর্ণতার প্রতিক। তাঁরা দাড়ী বাঁচাতে গিয়ে এবং তার সম্মান রক্ষা করতে গিয়ে নিজের গর্দান দিয়ে দেয়াকে সহজ মনে করতেন।
কিন্তু আফসোস মুসলমানদের অবস্থা দেখে তারা দাড়ীর প্রতি এতই রুষ্ট যে, অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে হলেও তার বিরুদ্ধে যেন অঘোষিত লড়াইয়ে নেমে পড়েছে। হাজার টাকা খরচ করেও যদি এমন হত যে আর কখনো মুখে দাড়ী গজাবে না, তারা সে পথেই অগ্রসর হতো। (নাঊযুবিল্লাহ্)
দাড়ী মুন্ডন হারাম হওয়ার দলীলঃ
আল্লাহ্ বলেন,

وَلَآَمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللَّهِ

“(শয়তান বলে) আমি অবশ্যই তাদেরকে আদেশ করব, তারা তখন আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে দিবে।” [ সূরা নিসাঃ ১১৯]
দাড়ী মুন্ডন করা বা কর্তন করা আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করার শামিল।
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
"দশটি জিনিস স্বভাবজাত। তম্মধ্যে তিনি উল্লেখ করেছেনঃ গোফ কর্তন করা ও দাড়ী ছেড়ে দেয়া।" [ মুসলিম]
অতএব গোঁফ লম্বা করা আর দাড়ী কেটে ফেলা সুস্থ স্বভাব বিরোধী কাজ।
ইবনে ওমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ وَفِّرُوا اللِّحَى وَأَحْفُوا الشَّوَارِبَ

“তোমরা মুশরিকদের বিরোধীতা কর। দাড়ী ছেড়ে দাও এবং গোঁফ ছোট কর।” [বুখারী ও মুসলিম]
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

جُزُّوا الشَّوَارِبَ وَأَرْخُوا اللِّحَى خَالِفُوا الْمَجُوسَ

“গোঁফ ছেঁটে ফেল এবং দাড়ী লম্বা কর আর এর মাধ্যমে অগ্নী পুজকদের বিরোধীতা কর।” [ মুসলিম]
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যাবতীয় বিষয়ে মুশরিক-হিন্দু, ইহূদী-খৃষ্টান ও অগ্নী পুজকদের বিরোধীতা করা প্রতিটি মুসলমানের উপর ওয়াজিব।
এ জন্যে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
“যারা কোন জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত হবে।” [ আবু দাউদ, আহমাদ হাদীছ সহীহ ]
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন,

مَنْ لَمْ يَأْخُذْ مِنْ شَارِبِهِ فَلَيْسَ مِنَّا

“যে ব্যক্তি গোঁফ কাটে না সে আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়।” [ তিরমিযী, নাসাঈ, হাদীছ সহীহ ]
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নির্দেশ ওয়াজিব বা আবশ্যকতার দাবী রাখে।
অন্য দিকে দাড়ী মুন্ডন করার মাধ্যমে নিজেকে নারীদের কাতারে শামিল করা হয়। কেননা নারীরা দাড়ী বিহীন। কোন নারী যদি পুরুষের আকৃতি ধারণ করে এবং কোন পুরুষ যদি নারীর আকৃতি ধারণ করে তবে তারা লা’নতপ্রাপ্ত।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নারীর সাদৃশ্য অবলম্বনকারী পুরুষকে এবং পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বনকারীনী নারীকে অভিশাপ করেছেন।” [ছহীহ আবু দাউদ, তিরমিযী]
দাড়ী রাখা ওয়াজিব না সুন্নাত?
এ নিয়ে মানুষ মতোবিরোধ করলেও দাড়ী রাখা যে ওয়াজিব সেটাই প্রনিধাণযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য কথা। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাড়ী রেখেছেন বলেই ইহা নবীজীর সুন্নাত বলে তার গুরুত্ব কমিয়ে দেয়ার কোন সুযোগ নেই। কেননা নবীজী দাড়ী নিজে রেখেছেন এবং তা রাখার জন্যে নির্দেশও দিয়েছেন। আর আল্লাহ্ তা’আলা যেমন ফরয করেন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও তেমনি ফরয বা ওয়াজিব করেন। তার কারণ হচ্ছে নবীজী কখনো নিজের কল্পনা প্রসূত কোন কথা বলতেন না। আল্লাহ্ তাঁর নিকট যা ওহী করতেন তিনি তাই বলতেন। (সূরা নজমঃ ৩,৪) তাছাড়া নবীজী দাড়ীর বিষয়ে যে সকল আদেশ সূচক শব্দ ব্যবহার করেছেন তার বিপরীতে এমন কোন হাদীছ খুঁজে পাওয়া যাবে না যা দ্বারা দাড়ীকে সুন্নাত বা মুস্তাহাব সাব্যস্ত যাবে।
তিরমিযীতে একটি হাদীছে বলা হয়েছেঃ

كان يأخذ من لحيته من عرضها وطولها

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দৈর্ঘ ও প্রস্ত দিক থেকে তাঁর দাড়ী কাটতেন।” এ হাদীছটি মওযু বা জাল যার কোন ভিত্তি নেই। ইমাম তিরমিযী হাদীছটি বর্ণনা করার পর নিজেই একথার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। [ দ্রঃ ছহীহ তিরমিযীঃ হা/২৭৬২]
ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন, দাড়ী মুন্ডন করা হারাম। ইমাম কুরতুবী (রঃ) বলেন, দাড়ী মুন্ডান, উঠানো বা কর্তন করা কোনটাই জায়েয নয়। শায়খ বিন বায (রঃ) বলেন, দাড়ীকে সংরক্ষণ করা, পরিপূর্ণ রাখা ও তা ছেড়ে দেয়া ফরয। এই ফরযের প্রতি অবহেলা করা জায়েয নয়। শাইখ ইবনে উসাইমীন (রঃ) বলেন, দাড়ী রাখা ওয়াজিব, উহা মুন্ডন করা হারাম বা কাবীরা গুনাহ।
প্রসিদ্ধ চার মাযহাবের ফিকাহবিদগণও দাড়ী ছেড়ে দেয়া ওয়াজিব ও কেটে ফেলাকে হারাম বলে মত প্রকাশ করেছেন।
হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ র্দুরে মুখতারে (২য় খন্ড/৪৫৯ পৃঃ) বলা হয়েছেঃ পুরুষের জন্য দাড়ী কর্তন করা হারাম। নিহায়া গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, দাড়ী এক মুষ্টির বেশী হলে তা কেটে ফেলা ওয়াজিব। কিন্তু এর চাইতে বেশী কর্তন করা যেমনটি পশ্চিমা দেশের লোকেরা এবং খোঁজা পুরুষেরা করে তা কেউ বৈধ বলেননি। আর দাড়ী সম্পূর্ণটাই কেটে চেঁছে ফেলা হিন্দুস্থানের ইহূদী ও কাফের-মুশরেকদের কাজ।”
মালেকী মাযহাব মতে দাড়ী কাটা হারাম। (আল আদাভী আলা শারহে কিফায়াতুত্ তালেব রাব্বানী ৮ম খন্ড ৮৯ পৃঃ)
ইমাম শাফেঈ (রহঃ) তাঁর প্রখ্যাত গ্রন্থ ‘আল উম্ম’ উল্লেখ করেছেন যে, দাড়ী কর্তন করা হারাম।
শাফেঈ মাযহাবের আলেম আযরাঈ বলেনঃ সঠিক কথা হচ্ছে কোন কারণ ছাড়া সম্পূর্ণ দাড়ী মুন্ডন করা হারাম। (হাওয়াশী শারওয়ানী ৯ম খন্ড ৩৭৬ পৃঃ)
হাম্বলী মাযহাবের বিদ্বানগণও দাড়ী মুন্ডনকে হারাম বলেছেন। (ইনসাফ, শরহে মুন্তাহা)
অতএব দাড়ী মুন্ডন করা বড় পাপ। এ থেকে তওবা করা আবশ্যক। অবশ্য দাড়ী মুন্ডন করা ও কেটে ছোট করার পাপ এক সমান নয়। যদিও উভয়টিই পাপের কাজ।
অনেক মানুষ দাড়ী মুন্ডন করাটাকে খুবই ছোট ও তুচ্ছ ব্যাপার মনে করে। কিন্তু ইহা মুন্ডন করা কোন সময় সবচেয়ে বড় গুনাহের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হতে পারে। কেননা এটা প্রকাশ্যে পাপের কাজে লিপ্ত হওয়ার অন্যতম। আর প্রকাশ্যে এভাবে অন্যায়ে লিপ্ত হয়ে তওবা না করলে হতে পারে দাড়ী মুন্ডনকারী আল্লাহর কাছে ক্ষমা পাবে না। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

كُلُّ أُمَّتِي مُعَافًى إِلا الْمُجَاهِرِينَ

“আমার উম্মতের সবাইকে ক্ষমা করা হবে। কিন্তু যারা প্রকাশ্যে পাপের কাজে লিপ্ত হয় তাদেরকে ক্ষমা করা হবে না।” [ বুখারী ও মুসলিম ]
তাছাড়া কোন মানুষ যদি দাড়ীকে অপছন্দ করে বা তা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে অথবা দাড়ীওয়ালা মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে, তবে সম্ভাবনা আছে একারণে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে কুফরীতে লিপ্ত হবে এবং মুরতাদ হয়ে যাবে। কেননা নবী (ছাঃ) যা নিয়ে এসেছেন তা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা বা ব্যঙ্গ করা বা তা ঘৃণা ও অপছন্দ করা ইসলাম ভঙ্গ হওয়ার অন্যতম একটি কারণ। আল্লাহ্ বলেন,

ذَلِكَ بِأَنَّهُمُ اتَّبَعُوا مَا أَسْخَطَ اللَّهَ وَكَرِهُوا رِضْوَانَهُ فَأَحْبَطَ أَعْمَالَهُمْ

“এই কারণে যে, তারা এমন বস্তুর অনুসরণ করেছে যার প্রতি আল্লাহ্ রাগাম্বিত। আর তারা তাঁর সন্তুষ্টিকে অপছন্দ করেছে। ফলে তিনি তাদের আমলগুলো বরবাদ করে দিয়েছেন।” [ সূরা মুহাম্মাদঃ ২৮]
সাবধান মুসলমান! নিজের আমল বরবাদ করবেন না বা অজ্ঞতা বশতঃ ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবেন না।
প্রিয় ভাই! সালাত সিয়াম ও অন্যান্য ওয়াজিব বিষয়ে আপনি যেমন আপনার পালনকর্তার আনুগত্য করেছেন। কেন এই বিষয়টিতে তাঁর নাফরমানী করছেন? উভয় বিষয়ের আদেশকারী রব কি একজনই নয়? কোথায় আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শন? কোথায় ঈমানের বলিষ্ঠতা ও সত্যতা? শরীয়তের বিধান নিয়ে কেন এই ছিনিমিনি খেলা?
পুরুষের সৌন্দর্য দাড়ী মুন্ডানোতে নয়। আল্লাহ্ তা’আলা মানুষকে সৃষ্টি করে তাকে নারী জাতী থেকে আলাদা ও বৈশিষ্ট মন্ডিত করেছেন। পৌরুষত্বের পরিচয় দাড়ী প্রদান করে তার সৌন্দর্য্যকে প্রস্ফুটিত করেছেন। কিভাবে মানুষ তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে তাকে পরিবর্তন করে নিজেকে নারী জাতীর সাথে সাদৃশ্য করতে চায়? ইসলামের শত্র“দের সাথে নিজেকে মিলিত করতে চায়? আর ধারণা করে যে, এতেই রয়েছে অতিরিক্ত সৌন্দর্য্য ও ব্যক্তিত্ব!? দাড়ী মুন্ডন না করলে বা না কাটলে যেন পুরুষের সৌন্দর্যই ফুটে উঠে না। পুরুষকে দাড়ী দিয়ে যেন আল্লাহ ভুল করেছেন। (নাউযুবিল্লাহ্) তাই সেই ভুল শোধরাতে তারা যেন ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।
আল্লাহ্ বলেনঃ

أأنْتُم أعْلَمُ أمِ اللهُ

“তোমরাই কি বেশী জ্ঞান রাখ না আল্লাহ্ অধিক জ্ঞান রাখেন?” [ সূরা বাকারাঃ ১৪০]
দাড়ী বিহীন পুরুষ যদি অধিক সুন্দর হত তবে তা করতে আল্লাহ্ অপারগ ছিলেন না। কিন্তু তিনি এর মাধ্যমে পুরুষকে সম্মানিত ও মর্যাদাবান করতে চেয়েছেন। পার্থক্য করেছেন নারীদের থেকে।
 সম্মানিত ভাই! আপনার এই কাজে কি দুনিয়াবী কোন উপকার আছে কি? পাবেন কি আখেরাতে কোন ছওয়াব-নেকী? কেন আপনি নিজেকে আল্লাহর ক্রোধের সম্মুখিন করছেন? কেন আপনি প্রতিদিন একটি অযথা পরিশ্রমে নিজেকে ক্লান্ত করছেন? কেন সময় ও অর্থের অপচয় করছেন?
হে আল্লাহ্ তুমি আমাদের সবাইকে তোমার সন্তুষ্টি মূলক কাজ করার তাওফীক দাও এবং যে কাজে তোমার অসন্তুষ্টি ও ক্রোধ রয়েছে তা থেকে আমাদেরকে বিরত রাখ। আমীন॥
                                                           Source ..... Quraneralo    
                            বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম 
“মানুষের হিসাব নিকাশের সময় নিকটবর্তী অথচ তারা বেখবর হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।” (সুরা আম্বিয়া, ২১ : ১)
সুতরাং যখন নির্ধারিত সময় আসবে এবং জগৎসমূহের স্রষ্টার সম্মুখে মানুষের দাঁড়ানোর সময় নিকটবর্তী হবে:
“শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে — একটিমাত্র ফুৎকার এবং পৃথিবী ও পর্বতমালা উত্তোলিত হবে ও চূর্ণ বিচূর্ণ করে দেয়া হবে।” (সুরা হাক্কাহ, ৬৯ : ১৩-১৪)
তখন যা অবশ্যম্ভাবী তা ঘটবে এবং বিচার দিবস নিকটে আনা হবে এবং প্রকৃত সত্যকে প্রকাশ করা হবে এবং চূড়ান্ত ঘন্টার আগমন ধ্বনিত হবে:
“এটা তো হবে কেবল এক মহা মহানাদ। সে মুহূর্তেই তাদের সবাইকে আমার সামনে উপস্থিত করা হবে।”(সুরা ইয়াসীন, ৩৬ : ৫৩)
এবং তারা
“কবর হতে তাদের পালনকর্তার দিকে ছুটে চলবে।” (সুরা ইয়াসীন, ৩৬ : ৫১)
দ্বিধাগ্রস্তভাবে এবং দ্রুততার সাথে, তারা বলবে:
“হায় আমাদের দুর্ভোগ! কে আমাদেরকে নিদ্রাস্থল থেকে উত্থিত করল? (তাদেরকে বলা হবে) : রহমান আল্লাহ তো এরই ওয়াদা দিয়েছিলেন এবং রাসূলগণ সত্য বলেছিলেন।” (সুরা ইয়াসীন, ৩৬ : ৫২)
“সুতরাং মৃদু গুঞ্জন ব্যতীত তুমি কিছুই শুনবে না।” (সুরা ত্বহা, ২০ : ১০৮)
তখন গলা শুকিয়ে যাবে সুতরাং
“এটা এমন দিন, যেদিন কেউ কথা বলবে না এবং কাউকে তওবা করার অনুমতি দেয়া হবে না।” (সুরা মুরসালাত, ৭৭ : ৩৫-৩৬)
এবং তাদের দৃষ্টি অবনমিত থাকবে এবং অবমাননা তাদেরকে গ্রাস করবে:
“সেই চিরজীবী চিরস্থায়ীর সামনে সব মুখমণ্ডল অবনমিত হবে এবং সে ব্যর্থ হবে যে জুলুমের বোঝা বহন করবে।” (সুরা ত্বহা, ২০ : ১১১)
এবং
“সেদিন কোন কোন মুখ উজ্জ্বল হবে আর কোন কোন মুখ হবে কালো।” (সুরা আল ইমরান, ৩ : ১৬)
তখন মানুষ দুই দলে বিভক্ত হবে:
“একদল জান্নাতে এবং একদল জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” (সুরা আশ শূরা, ৪২ : ৭)
অতপর, দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তির জন্য তাদের দুরবস্থার জন্য দুর্ভোগ এবং তাদের শেষ অবস্থার করুণ পরিণতির জন্য তাদের উপর পুনরায় দুর্ভোগ।
“আর যদি আপনি দেখেন যখন তাদেরকে প্রতিপালকের সামনে দাঁড় করানো হবে। তিনি বলবেন : এটা কি বাস্তব সত্য নয়।” (সুরা আনআম, ৬ : ৩০)
তখন তারা শুধু একথাই বলবে:
“হ্যাঁ আমাদের প্রতিপালকের কসম।” (সুরা আনআম, ৬ : ৩০)
বাস্তবিকই তারা রাসূলের ডাকে সাড়া দেয়নি, কিন্তু তারা শপথ করত (যে তারা পুনরুত্থিত হবে না) যতক্ষণ তাদেরকে না দেখানো হবে এবং তাদের বিভ্রান্তি দূর করা না হবে, সুতরাং সৃষ্টির সূচনাকারী তাদের বলবেন:
“অতএব, তোমরা আস্বাদন কর, আমি কেবল তোমাদের শাস্তিই বৃদ্ধি করব।” (সূরা নাবা, ৭৮ : ৩০)
পুনরুত্থানে অবিশ্বাসী বস্তুবাদীরা, যারা বলত :
“আমাদের এ পার্থিব জীবনই জীবন, আমাদেরকে পুনরায় জীবিত হতে হবে না।” (সুরা আনআম, ৬ : ২৯)
অথবা যারা আল্লাহর রাসূলদের এবং তাদের আহ্বানকে বাধা দিয়েছিল, তারা শাস্তির এবং চূড়ান্ত ন্যায়বিচারের সেই দিনটিতে উপনীত, যেদিন
“কারও প্রতি জুলুম করা হবে না এবং তোমরা যা করবে, কেবল তারই প্রতিদান পাবে।” (সুরা ইয়াসীন, ৩৬ : ৫৪)
তারা তাদের চোখ, হৃদয়, কানকে সত্যের প্রতিটি আলো থেকে বিমুখ রেখেছিল। সেজন্য তাদের শাস্তি:
“আমি কেয়ামতের দিন তাদের সমবেত করব, তাদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায়, অন্ধ অবস্থায়, মূক অবস্থায় এবং বধির অবস্থায়। তাদের আবাসস্থল জাহান্নাম।” (সুরা বনী ইসরাইল, ১৭ : ৯৭)
তাই তাদের মধ্যে একজন বলবে :
“হে আমার পালনকর্তা, আমাকে কেন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করলেন? আমি তো চক্ষুষ্মান ছিলাম। আল্লাহ বলবেন, এমনিভাবে তোমার কাছে আমার আয়াতসমূহ এসেছিল, অতঃপর তুমি সেগুলো ভুলে গিয়েছিলে। তেমনিভাবে আজ আমি তোমাকে ভুলে যাব।” (সুরা তোয়াহা, ২০ : ১২৫-১২৬)
তাদের হৃদয় অনুতাপে ক্ষতবিক্ষত হবে যাবে এবং
“যালিম সেদিন আপন হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, হায় আপসোস আমি যদি রাসূলের পথ অবলম্বন করতাম! হায় আমার দুর্ভাগ্য আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম!” (সুরা ফুরকান, ২৫ : ২৭)
এবং দুনিয়ার দিনগুলো সম্পর্কে পাপীরা তখন বলবে :
“হায় আপসোস এর ব্যাপারে আমরা কতই না ত্র“টি করেছি! তারা স্বীয় স্বীয় বোঝা পৃষ্ঠে বহন করবে। শুনে রাখ, তারা যে বোঝা বহন করবে, তা নিকৃষ্টতর বোঝা। পার্থিব জীবন ক্রীড়া ও কৌতুক ব্যতীত কিছুই নয়। পরকালের আবাস মুত্তাকীদের জন্য শ্রেষ্ঠতর। তোমরা কি বোঝ না?” (সুরা আনআম, ৬ : ৩১ – ৩২)
হায় সেই দিনটি কী ভয়ংকরই না হবে এবং এর ত্রাস কতই না ভীতিপ্রদ হবে! সেই ব্যক্তিই প্রকৃতপক্ষে মুক্তিপ্রাপ্ত হবে, যে ঐ দিনে মুক্তি পাবে এবং সেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে যার পাপ তাকে ঐদিন ধ্বংস করবে। এ ধরনের দৃষ্টান্তের ব্যাপারে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। তাই আসুন আমরা প্রত্যাবর্তন করি এবং নিজেদের আত্মাকে প্রশ্ন করি, তাকে আল্লাহর আনুগত্যে বাধ্য করি, একে পবিত্র করে তুলি এবং উৎসাহ সহকারে একাজে আত্মনিয়োগ করি।

আনুষঙ্গিক বিষয়সমূহ

  • শেষ দিবস – ইমাম ইবনে কাছীর [ডাউনলোড]
  • কিয়ামতের আলামত – শাইখ আব্দুল্লাহ বিন শাহেদ [ডাউনলোড]   সংগৃহীত
                            বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম                                
হযরত ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা) বলেছেন, সালাতের প্রথম সময় (অর্থ্যাৎ প্রথম ওয়াক্তে আদায়) হচ্ছে আল্লাহর সন্তোষ এবং শেষ সময় (সালাত আদায়) হচ্ছে আল্লাহর ক্ষমা (অর্থ্যাৎ এতে সন্তষ্টি পাওয়া যায় না, গুনাহ থেকে বাঁচা যায় মাএ) ।

  রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে

 

 


হযরত উম্মে সালামা (রা) থেকে বর্ণিত ,
             রাসূলুল্লাহ (স) বললেন,
 যে ব্যক্তির কাছে  কুরবানীর জন্তু রয়েছে এবং যে কুরবানী করতে মনস্থ করেছে যিলহজ্ব মাসের চাঁদ  দেখা দিলে কুরবানী না করা পর্যন্ত সে যেন নিজের চুল ও নখ না কাটে। (মুসলিম)
Design by Md.Sahahdad Hossain | Published by ZASJSS - মুসলিম উম্মার ঐক্য |