যে ব্যক্তি মসজিদে দুনিয়াবী কথাবার্তা বলবে আল্লাহ তা’লা তার চল্লিশ বছরের নেক আমল বরবাদ করে দিবেন ।

এটি লোকমুখে হাদীস হিসেবে প্রসিদ্ধ হলেও প্রকৃত পক্ষে তা রাসূলুল্লাহ(সঃ) এর হাদীস নয় ।

আল্লামা সাগানী (রহঃ) রিসালাতুল মাওযূআতঃ পৃষ্টা 5, আল্লামা কাউকজী (রহঃ) আল লুউলুউল মারসূঃ পৃষ্টা 78-এ একে জাল বলে উল্লেখ 
করেছেন ।
আযান দেওয়ার সময় এবং আযান শ্রবণের সময় দুনিয়াবী কোন কথা বললে চল্লিশ বছরের নেকী নষ্ট হয়ে যায় ।

এ কথাও ঠিক নয় এবং তা রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর হাদীস নয় । -যাইলুল মাকাসিদিল হাসানা

সহীহ হাদীসের আলোকে আযানের সময় শ্রোতাদের দায়িত্ব পূর্বে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে । সে মোতাবেক আমলে যত্নবান হওয়ায় উচিত ।


                           من تكلم عند الاذان خيف عليه زوال الإيمان    


যে ব্যক্তি আযানের সময় কথা বলবে তার ঈমান চলে যাওয়ার আশংকা রয়েছে ।

আযানের সময় নিয়ম হল আযানের জবাব দেওয়া । মুআযযিন যে শব্দগুলো বলবে, শ্রোতারাও সে শব্দগুলোই বলবে । তবে حي على الصلاة(হায়্যা আলাসসালাহ) এবং حي على الفلاح (হায়্যা আলাল ফালাহ) বলার পর শ্রেতারা (লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ) পড়বে । অবশেষে আযানের এ দুয়া পাঠ করবেঃ

اللهم رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلاَةِ القَائِمَةِ آتِ مُحَمَّداً الْوَسِيْلَةَ وَ الفَضِيْلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُوْداً الَّذِيْ وَعَدْتَهُ

হে আল্লাহ্এই পরিপূর্ণ আহবান এবং এই প্রতিষ্ঠিত নামাযের তুমিই প্রভূ। মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)কে দান কর সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান এবং সুমহান মর্যাদা। তাঁকে প্রতিষ্ঠিত কর প্রশংসিত স্থানে যার অঙ্গিকার তুমি তাঁকে দিয়েছো।

এগুলো সবই সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত ।তবে ‘আযানের সময় কথা বললে ঈমান চলে যাওয়ার আশংকা রয়েছে’ এ কথাটি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয় ।
-আল্লামা সাগানী (রহঃ) একে জাল বলেছেন । রিসালাতুল মাওযূআতঃ 12,কাশফুল খাফাঃ 2/226, 240
আযান কিংবা ইকামতে রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর নাম আসলে কোনো কোনো লোককে তর্জনী আঙ্গুলদ্বয়ে চুমো খেয়ে তা চোখে বুলিয়ে দিতে দেখা যায় ।
তাদের এই আমলটি মুলত ‘মুসনাদে দায়লামী’ (যা বাতিল ও মাওযূ রেওয়াতে ভরপুর)-এর নিম্নোক্ত জাল রেওয়াতের উপর নির্ভশীলঃ

হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) যখন মুআযযিন কে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লা’ বলতে শুনলেন, তখন তিনিও তা বললেন এবং বৃদ্ধাঙ্গুলিদ্বয়ে চুমো খেয়ে তা চোখে বুলিয়ে নিলেন । (তা দেখে ) রাসূলুল্লাহ (সঃ) ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি আমার দোস্তের ন্যায় আমল করবে , তার জন্য আমার সুপারিশ অবধারিত ।
হাফেজ সাখাবী (রাঃ) এ সম্পর্কে বলেনঃ এটি প্রমাণিত নয় ।
-আল মাকাসিদুল হাসানাঃ 450-451

আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রহঃ) এ সম্পর্কে বলেনঃ

মুআযযিনের শাহাদতে রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর নাম শুনে আঙ্গুলে চুমো খাওয়া এবং তা চোখে মুছে দেওয়ার ব্যাপারে যতগুলো রেওয়াত বর্ণিত হয়েছে সবগুলোই জাল ও বানোয়াট ।  
-তাইসীরুল মাকাল-ইমাদুদ্দীনঃ প্রকাশকাল 21-1978 -রাহে সুন্নতঃ 243

এটা জাল হাদীস-শুধু তাই নয়; বরং এ ব্যাপারে কোন সাহাবী, তাবেঈ, তাবে তাবেঈ ও আয়িম্মায়ে মুজতাহিদ থেকেও কিছু বর্ণিত নেই ।
  
আল্লামা লাখনোভী (রহঃ)ও এ ব্যাপারে দীর্ঘ আলোচনার পর লেখেনঃ 

সত্য কথা হল, ইকামত কিংবা অন্য কোথাও রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর নাম শ্রবণ করা মাত্রই নখে চুমো খাওয়া (এবং তা চোখে বুলিয়ে দেওয়া) সম্পর্কে কোন হাদীস বা সাহাবীর কোন আসর বা আমল বর্ণিত হয়নি । যে তা দাবী করবে সে চরম মিথ্যাবাদী এবং এটি একটি ঘৃণ্য ও নিকৃষ্ট বিদআত; শরীয়তের কিতাব সমূহে যার কোনো ভিত্তিই নেই ।
-সিআয়াঃ 2/46


Design by Md.Sahahdad Hossain | Published by ZASJSS - মুসলিম উম্মার ঐক্য |