Showing posts with label general knowledge. Show all posts
Showing posts with label general knowledge. Show all posts




শিরোনাম: নবীর জন্মদিন [মীলাদুন্নবী] উদযাপনের বিধান
ভাষা: বাংলা
সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: এই পোস্টারে সংক্ষেপে মীলাদুন্নবী উদযাপনের বিধান আলোচিত হয়েছে। পোস্টারটি প্রিন্ট করে বিভিন্ন মসজিদের বাইরের দেওয়ালে লাগিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
সংযোজন তারিখ: 2013-04-25
শর্ট লিংক: http://IslamHouse.com/422654
:: এই শিরোনামটি বিষয় অনুসারে নিম্নের ক্যাটাগরিগুলোতে বিন্যস্ত ::
এই ‘বিষয় পরিচিতি’টি নিম্নোক্ত ভাষায় অনূদিত:: আরবী

বিষয়ের সংযুক্তিসমূহ ( 1 )
1.

নবীর জন্মদিন [মীলাদুন্নবী] উদযাপনের বিধান
5.5 MB
ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে কি কোনো ইসলামী দলে যোগ দেয়া যাবে?
ভাষা: বাংলা
সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: এটি সম সাময়িক বিষয়ের উপর একটি গুরুত্বপূর্ণ ফতওয়া। এখানে বর্তমান সময়ে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে ইসলামী দলে যোগদানের বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে।
সংযোজন তারিখ: 2013-07-17
শর্ট লিংক: http://IslamHouse.com/434019
:: এই শিরোনামটি বিষয় অনুসারে নিম্নের ক্যাটাগরিগুলোতে বিন্যস্ত ::
এই ‘বিষয় পরিচিতি’টি নিম্নোক্ত ভাষায় অনূদিত:: আরবী

বিষয়ের সংযুক্তিসমূহ ( 2 )
1.

ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে কি কোনো ইসলামী দলে যোগ দেয়া যাবে?
266.8 KB
: ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে কি কোনো ইসলামী দলে যোগ দেয়া যাবে?.pdf
2.

ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে কি কোনো ইসলামী দলে যোগ দেয়া যাবে?
2.7 MB
: ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে কি কোনো ইসলামী দলে যোগ দেয়া যাবে?.doc


ইন্টারনেট ইমান, আখলাক ও বিবেক-বুদ্ধির পরীক্ষা

লেখকঃ মুহাম্মাদ বিন ইব্রাহিম আল হামদ

অনুবাদকঃ মুহাম্মাদ শামসুল হক সিদ্দিক



এই পৃষ্ঠাগুলো ইন্টারনেট এবং ইন্টারনেটের শুভ ও কল্যাণকর ব্যবহার কীভাবে সম্ভব সে বিষয়ে কিছু ধারণার সন্নিবেশ। আশা করি এ প্রবন্ধে নিম্নবর্ণিত পয়েন্টগুলোর প্রতি আলোকপাত করতে সক্ষম হব:

- ইন্টানেট একটি পরীক্ষা।

- কীভাবে ইন্টারনেটের সদ্ব্যবহার সম্ভব।

- শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ থেকে সতর্কতা।

- সময় নির্দিষ্টকরণ ও উদ্দেশ্য নির্ণয়।

- শেষ ফলাফলের প্রতি দৃষ্টি।

- দৃষ্টি অবনত রাখা।

- নিশ্চিত হওয়া।

- ভেবে-চিন্তে অভিমত ব্যক্ত করা।

- উপাস্থাপনে ভারসাম্যতা।

১০- যা উপকারী তা পেশ করায় অংশ গ্রহণ।

১১- অন্যায়ের প্রতিবাদ।

১২- কিছু জিজ্ঞাসা

আল্লাহর উপর ভরসা করে তাহলে আলোচনা শুরু করা যাক।

মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহিম আল হামদ

ইন্টারনেট তথ্যজগতে একটি বিশাল আন্দোলন নিঃসন্দেহে। তবে এই তথ্যজগতটি ইমান আখলাক এমনকী বিবেক-বুদ্ধি পরীক্ষার একটি বিশাল ময়দানও বটে। যা শুভ ও কল্যাণকর তাও এখানে পুরোরূপে উন্মুক্ত, যা অশুভ-অকল্যাণকর তাও এখানে নানা ব্যঞ্জনে উপস্থাপিত। যে ইন্টানেট ব্যবহার করে সে তার জিহ্বা নির্বাধভাবে ছেড়ে দিতে পারে, সে তার দৃষ্টি যেখানে ইচ্ছা সেখানেই ঘুরাতে পারে, সে তার হাত দিয়ে যা চায় তাই লিখতে পারে। তাকে নিবারণকারী কেউ নেই, তাকে ধমক দেওয়ারও কেউ নেই, না আছে কেউ থামিয়ে দেয়ার।

সে যদি ঊর্ধ্বে উঠতে সক্ষম হয়, পরিণামের প্রতি দৃষ্টি দেয়, তার প্রতিপালক তাকে দেখছেন এই বিশ্বাস হৃদয়ে জাগ্রত রাখে, তবে সে সফলতার সাথে প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে সামনে এগুতে সক্ষম হবে।

আর যদি সে নিজের লাগাম ছেড়ে দেয়, তার খায়েশ যেদিকে তাড়িত করে সেদিকে ধাবমান হয়, ইমান ও তাকওয়ার প্রহরী তার হৃদয় থেকে বিতারিত হয়, তাহলে আবর্জনার স্তুপে ঢুকে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা থেকে যায়, আর এর অশম্ভাবী পরিণতি হল অপদস্ততা, সুভদ্রতার মৃত্যু, নিকৃষ্টতা ও পঙ্কিলতায় নাক ঘর্ষণ।

ইন্টারনেট ও তার ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে বেঁচে থাকার জন্য কিছু পথ-পদ্ধতি রয়েছে, নিম্নে সেগুলো উল্লেখ করা হল।

- ইন্টারনেটের সদ্ব্যবহার

বুদ্ধিমানের কাজ হল ইন্টারনেটের সদ্ব্যবহার করা। নিজেকে অতিরঞ্জিত আকারে বিশ্বাস না করা; কেননা এ-ধরনের অতিবিশ্বাস নিজেকে ফেতনায় নিপতিত করতে পারে, যার করালগ্রাস থেকে রক্ষা পাওয়া হয়ত অসম্ভব হয়ে ওঠবে।

যদি কেউ ইন্টারনেটে কোনো কিছু পেশ করতে চায়, অথবা কোনো মন্তব্য ইত্যাদি করতে চায়, তাহলে উচিত হবে প্রথমে বিবেচনা করে দেখা, এর দ্বারা কোনো উপকার হবে কি-না, তাকে সতর্ক হতে হবে এর দ্বারা যেন মুমিনদের কোনো কষ্ট না পৌঁছে, মুমিনদের কোনো ক্ষতি না হয়। অতঃপর মুমিনদের মাঝে অশ্লীলতা ছড়ানোর সকল আকার-প্রকৃতি থেকে তাকে বিরত থাকতে হবে। অহেতুক কথা-বার্তা থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে। মানুষের অনুভূতি নিয়ে তামাশায় লিপ্ত হওয়া, একে অপরকে অপবাদ দেওয়ার ডালি খুলে-বসা, একদলকে অন্যদলের উপর চড়াও করে দেওয়া ইত্যাদি থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।

কোনো মন্তব্য অথবা কারো কথা খণ্ডন করতে হলে ইলমনির্ভর, আদব, সদয়ভাব ও শালীন ভাষায় করা জরুরি। কোনো কিছুতে অংশ নিতে চাইলে তা যেন হয় নিজস্ব ও সরাসরি নামে। সরাসরি নিজের নাম ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভয় হলে উচিত হবে এমন কোনো বিষয় না লেখা যা অবৈধ, অশিষ্ট। যে দিন মানুষের অন্তরাত্মা উন্মুক্ত করে সবকিছু সম্মুখে নিয়ে আসা হবে সেদিন আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান হওয়ার বিষয়টি হৃদয়ে সজাক রাখতে হবে।

- শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ থেকে দূরে থাকা

বুদ্ধিমানের উচিত শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ থেকে দূরে অবস্থান করা; শয়তান মানুষকে গোমরাহ করার জন্য ওঁৎ পেতে থাকে সারাক্ষণ। সকল পথ ও পদ্ধতি সে ব্যবহার করে যায় তার কর্মসিদ্ধির উদ্দেশ্যে। শয়তান মানুষের চিরশত্রু, যে শত্রু মানুষকে গোমরাহ করার মাকসদ নিয়ে যাপন করে প্রতিটি মুহূর্ত। আল্লাহ তা’আলা আল কুরাআনের একাধিক জায়গায় বলেছেন, { তোমরা শয়তানের পদাঙক অনুসরণ করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের স্পষ্ট শত্রু।}

বুদ্ধিমান ব্যক্তি কখনোই তার শত্রুর প্রতি আস্থা রাখে না। ফেতনার থাবায় নিজেকে কখনো সঁপে দেবে না। ফেতনায় পড়বে না বলে অধিক আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়বে না, জ্ঞানে, দীন ও ইল্‌মে সে যে পর্যায়েই থাক না কেন।

বুদ্ধিমান ব্যক্তি বরং ফেতনা থেকে অবস্থান করে বহু দূরে। ফেতনার কাছাকাছি যাওয়া থেকে সে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করে। এসবের পরে যদি সে কখনো নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ফেতনায় নিপতিত হয়, তবে তা থেকে নিষকৃতির জন্য আল্লাহর সাহায্য আসে। আল্লাহর করুণা তার সঙ্গ দেয়। আর যদি সে নিজের উপর অতিমাত্রায় বিশ্বাসী হয়ে ওঠে, নিজের নখর দিয়ে নিজের গোর নির্মাণ করে চলে, তবে তার উপর থেকে আল্লাহর লুতফ-করুণা সরিয়ে নেওয়া হয়। ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে একা।

ইউসুফ আলাইহিসসালাম নিজ থেকে ফেতনায় নিপতিত হন নি, ফেতনাই বরং তার মুখোমুখি হয়েছে, আর তখন তিনি আল্লাহর কাছে পানাহ চেয়েছেন। ফেতনার বিপদ থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর আশ্রয় চেয়েছেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে আল্লাহ যদি নারীদের ষড়যন্দ্র থেকে তাকে রক্ষা না করতেন তবে তিনি জাহেলদের দলভুক্ত হয়ে যেতেন। আল্লাহর উপর তাঁর প্রচণ্ড ভরসার কারণেই আল্লাহর করুণা তার সঙ্গ দিয়েছে, ফলে তিনি ভয়াবহ বিপদ থেকে রেহাই পেতে সক্ষম হয়েছেন।

- সময় নির্ধারণ ও উদ্দেশ্য নির্ণয়

ইন্টারনেটের ক্ষতিকর দিক থেকে বাঁচার একটি উপায়, সময় নির্ধারণ ও সুনির্দিষ্টভাবে কীভাবে কি কাজ করতে যাচ্ছে তা নির্ণয় করে নেওয়া, উদ্দেশ্য স্থির করে নেওয়া।

এর বিপরীতে অনির্দিষ্টভাবে যদি একটির পর একটি পেইজ ওপেন করে চলে, এক সাইটের পর অপর সাইট ভিজিট করে চলে, তবে অযথা সময় নষ্ট ব্যতীত অন্য কিছু আশা করা যায় না। যদি কোনো উপকার আহরণে সক্ষম হয় তবে তা হবে খুবই ক্ষীণ।

- পরিণাম দর্শন

ইন্টারনেটের ফেতনা থেকে বাঁচার জন্য বুদ্ধিমান ব্যক্তির উচিত হবে তার কৃতকর্মের পরিণামের প্রতি দৃষ্টি রাখা। নিজেকে দমন করা, নিজের প্রবৃত্তি-খায়েশের ঘারে লাগাম লাগানো। ইবনুল জাউযি রা. বলেন, ‘হে তাকওয়ার দ্বারা সম্মানের আসনে সমাসীন ব্যক্তি, তুমি তাকওয়ার সম্মানকে গুনাহের অপদস্ততার বিনিময়ে বিক্রি করো না। যে জিনিসের প্রতি তোমার খায়েশ জন্মেছে তা বর্জন করে তোমার প্রবৃত্তির তৃষ্ণা মেটাও, যদিও তা কষ্টদায়ক হয়, জ্বালা দেয়।’

তিনি আরো বলেছেন, ‘প্রবৃত্তিকে দমনের শক্তিতে এমন স্বাদ বয়েছে যা সকল স্বাদকে অতিক্রম করে যায়; তুমি কি দেখো না, যারা প্রবৃত্তিতে আরোপিত তারা কীভাবে অপদস্ত হয়; কেননা তারা পরাজিত। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি প্রবৃত্তিকে দমন করে তার ব্যাপারটি সম্পূর্ণ উল্টো; কেননা সে শক্তিমান হওয়ার স্বাক্ষর রাখে, কারণ প্রবৃত্তিকে দমন করায় সে পারঙ্গমতার পরিচয় দেয়।

- যৌন আবেদনময় সকল বিষয় থেকে দূরে থাকা আবশ্যক

যৌন আবেদন-সুরসুরি সৃষ্টিকারী সকল বিষয় থেকে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে দূরে থাকতে হবে। খারাপ ও পর্নো সাইটগুলো অবশ্যই বর্জন করতে হবে। যেসব ব্লগ-সাইটে ফাহেশ-অশালীন কথাবার্তা বলা হয়, যেসব প্রবন্ধে প্রবৃত্তি উসকিয়ে দেওয়ার মেটার রয়েছে, তা বর্জন করা ইমান ও আখলাকের দাবি। আবেদনময় চিত্র-ছবি, কামনা-বাসনা উসকিয়ে দেয় এমন ফুটেজ থেকে দূরে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ; মানুষের মন- সৃষ্টিগতভাবে প্রবৃত্তির প্রতি আসক্ত, প্রবৃত্তি যেদিকে টানে সেদিকেই সে চলতে শুরু করে। মানুষের মন বারুদ অথবা প্রেট্রোলতুল্য, যা জ্বলার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। এসব বস্তু প্রজ্জ্বলনকারী বস্তু থেকে যতক্ষণ দূরে থাকে, শান্ত থাকে, জ্বলার আশঙ্কা থেকে মুক্ত থাকে। এর অন্যথা হলেই তা জ্বলে উঠে, জ্বলে উঠা স্বাভাবিক।

মানুষের মনও অভিন্ন প্রকৃতির। মানুষের মন শান্ত-নিরব থাকে। তবে যখন তা উসকিয়ে দেওয়ার মত কোনো কিছুর নিকটবর্তী হয়, দুষ্টপ্রবৃত্তিকে জাগিয়ে দেওয়ার মত কোনো শ্রব্য, দৃশ্য, পাঠ্য, অথবা শুঁকার বিষয়ের স্পর্শে আসে তখন তার ঘুমন্ত প্রবৃত্তি দানবের মত জেগে ওঠে, তার ব্যাধিগুলো আন্দোলিত হয়ে ওঠে, তার খায়েশ-আসক্তি বাধভাঙ্গা জোয়ারের মত হয়ে হাজির হয়। তাই এসব প্রবৃত্তিউদ্দীক বিষয় থেকে দূরে থাকা অত্যন্ত জরুরি।

-দৃষ্টি অবনত রাখা

অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনাকাঙ্খিত চিত্র কখনো কখনো সামনে এসে হাজির হয়। এমতাবস্থায় ব্যক্তি যদি তার দৃষ্টিকে অবনত করে নেয়, তবে সে একদিকে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করল অন্যদিকে নিজের হৃদয়কেও তৃপ্তি দিতে সক্ষম হল। চোখ হৃদয়ের আয়না। চোখের লাগাম ছেড়ে দেওয়া অনুশোচনার কারণ, পক্ষান্তরে দৃষ্টি অবনতকরণ, হৃদয়কে করে শান্ত-তৃপ্ত। যখন কেউ তার দৃষ্টিকে লাগাম লাগিয়ে রাখে তখন তার হৃদয়ও কামনা-বাসনার মুখে লাগাম লগিয়ে রাখে। চোখ উন্মুক্ত-স্বাধীন করে দিলে, হৃদয়ও উন্মুক্ত, স্বাধীন হয়ে যায়।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:

[قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ ]. النور:৩০

{মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র।}

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ রা. -আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন,‘ -আয়াতে আল্লাহ তাআলা, দৃষ্টি অবনত করা ও লজ্জাস্থান হেফাযত করাকে আত্মার পরিশুদ্ধির সমধিক শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে ব্যক্ত করেছেন। আর আত্মার পরিশুদ্ধির অর্থ সকলপ্রকার দুষ্ট, অশালীন, জুলুম, শিরক, মিথ্যা ইত্যাদি থেকে মুক্ত হওয়া।

- নিশ্চিত হওয়া

ইন্টারনেট ব্যবহারকারী জন্য এটা জরুরি যে, সে যা বলছে বা শুনছে বা পড়ছে অথবা বর্ণনা করছে তার শুদ্ধতা ভালভাবে যাচাই করে নেয়া, কেননা এটা মানুষের বুদ্ধিমত্তা, ভারিক্কি ও ইমানের পরিচয়। আর এটা জরুরি এ জন্যও যে, ইন্টারনেটে ভালমন্দ সবই লেখা হয়, সক্ষম-অক্ষম সবাই তাতে লেখে। অনেকেই আবার অপরিচিত নাম বা ছদ্মনামে লেখে।

সে কারণেই বুদ্ধিমান ব্যক্তির কাজ হবে সতর্কতা অবলম্বন করা। তাই যখন সে কোনো সংবাদ বা অন্য কোনো বিষয় ইন্টারনেটের মাধ্যমে জানবে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করবে। নিশ্চিত হওয়ার পর এ সংবাদ বা তথ্যটি প্রচারের উপযোগিতা নিয়ে ভাববে। যদি তা কল্যাণকর হয় তবে প্রচার করবে। অন্যথায় তা প্রচার থেকে বিরত থাকবে। এই ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ির কারণে কত খারাবিই না সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই এমন রয়েছে যারা ইন্টারনেটে যা পায় মহাসত্যের মতো বিশ্বাস করে নেয়। এটা নির্বুদ্ধিতার আলামত; কেনন বুদ্ধিমানের আচরণ হল নিশ্চিত হওয়া, সত্য-মিথ্যা যাচাই করে নেয়া। এমনকী কোনো সুপরিচিত ব্যক্তির কথা হলেও তা যাচাই করে দেখা উচিত। অপরিচিত মানুষের কথাবার্র্তার বেলায় কি অবস্থান নিতে হবে তা বলাই বাহুল্য। মানুষ যা শোনে তাই প্রচার করতে শুরু করা থেকে হাদীসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে, সহীহ মুসলিমের এক বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,‘ ব্যক্তির মিথ্যা বলার জন্য এতটুই যথেষ্ট যে. সে যা শুনে তা বর্ণানা করতে লাগে’ [মুসলিম]

ফেতনা-ফাসাদের সময় এ আদবটি অধিক গুরুত،সহ পালন করা জরুরি। যে ব্যক্তি নিজের উপকার চায় তার উচিত নিরাপদে থাকার খাতিরে, ভর্ৎনা থেকে বেঁচে থাকার পضয়োজনে, এই আদবটি কঠিনভাবে ধরে রাখা। আল্লাহ তাআলা বলেন:

[وَإِذَا جَاءَهُمْ أَمْرٌ مِنَ الأَمْنِ أَوْ الْخَوْفِ أَذَاعُوا بِهِ وَلَوْ رَدُّوهُ إِلَى الرَّسُولِ وَإِلَى أُوْلِي الأَمْرِ مِنْهُمْ لَعَلِمَهُ الَّذِينَ يَسْتَنْبِطُونَهُ مِنْهُمْ وَلَوْلا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ لاتَّبَعْتُمْ الشَّيْطَانَ إِلاَّ قَلِيلاً] النساء: ৮৩.

{আর যখন তাদের কাছে শান্তি কিংবা ভীতিজনক কোনো বিষয় আসে, তখন তারা তা প্রচার করে। আর যদি তারা সেটি রাসূলের কাছে এবং তাদের কর্তৃত্বের অধিকারীদের কাছে পৌঁছে দিত, তাহলে অবশ্যই তাদের মধ্যে যারা তা উদ্ভাবন করে তারা তা জানত। আর যদি তোমাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর রহমত না হত, তবে অবশ্যই অল্প কয়েকজন ছাড়া তোমরা শয়তানের অনুসরণ করতে।}[সূরা আননিসা: ৮৩]

শায়খ আল্লামা আব্দুর রহমান আসসুদি এ-আয়াতের তাফসিরে বলেন, ‘ এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে তার বান্দাদেরকে, তাদের অযাচিত কাজ করার পর একটি দীক্ষা। অর্থাৎ যখন তারা কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মুখোমুখি হবে, সর্বসাধারণের নিরপত্তা সংক্রান্ত কোনো বিষয় হবে, মুমিনদের আনন্দের বা দুঃখের কোনো সংবাদ থাকবে, তবে এ-বিষয়ে প্রথমে নিশ্চিত হতে হবে, এবং সংবাদটি প্রচারে দ্রুততার আশ্রয় নেওয়া যাবে না। বরং বিষয়টিকে রাসূল ও উলুল আমরের কাছে রুজু করতে হবে, উলুল আমর হলেন, জ্ঞানী ও সুচিন্তিত মতামত দিতে পারঙ্গম, নসিহতকারী ও সুভদ্র ব্যক্তি যারা বিষয়ের নিগূঢ়তায় প্রবেশ করতে এবং মুমিনের স্বার্থ কোথায় তা বুঝতে সক্ষম। তারা যদি মনে করেন যে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য প্রচার করলে ফায়দা হবে, মুমিনদের উদ্যমতা বেড়ে যাবে, তাদের আনন্দের কারণ হবে, শত্রুপক্ষের অনুশোচনা বর্ধনের কারণ হবে, তাহলে তা প্রচার করবে, এর অন্যথা হলে তা প্রচার থেকে বিরত থাকবে। এ জন্যই আল্লাহ তাআলা বলেছেন, {তাদের মধ্যে যারা তা উদ্ভাবন করে তারা তা জানত।} অর্থাৎ তারা তাদের সুচিন্তা ও জ্ঞানে তা থেকে সঠিক বিষয়টি উদ্ধার করতে পারবে।

এখানে আমরা আরেকটি আদর্শিক বিধান পাচ্ছি, আর তা হল, কোথাও যদি বাহাস শুরু হয় তবে উচিত হবে এ-বিষয়ে যারা দক্ষ তাদের শরণাপন্ন হওয়া। নিজেকে এগিয়ে না দেয়া. কেননা এটাই নির্ভুলতার জন্য সমধিক উপযোগী পদ্ধতি।

কোনো কিছু শোনার সাথে সাথে তা প্রচার করতে লেগে যাওয়া উচিত নয় এ-বিধানটিও আমরা উক্ত আয়াতে খোঁজে পাই। বরং কথা বলার পূর্বে চিন্তাভাবনা করে দেখা, কল্যাণ কোথায় তা ভেবে দেখে প্রচার করবে কি করবে না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারেও বিধান পাচ্ছি উক্ত আয়াতে।

নিশ্চিত হওয়া ও ভেবে-চিন্তে দেখার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে শায়খ সুদি অন্য একটি আয়াত উল্লেখ করেন, আয়াতটি হল,

[وَلا تَعْجَلْ بِالْقُرْآنِ مِنْ قَبْلِ أَنْ يُقْضَى إِلَيْكَ وَحْيُهُ وَقُلْ رَبِّ زِدْنِي عِلْماً] طه: ১১৪

{ তোমার প্রতি ওহী সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বে তুমি কুরআন পাঠে তাড়াহুড়া করো না এবং তুমি বল, ‘ হে আমার রব, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিন।’}

তিনি বলেন, এখানে জ্ঞান অন্বেষণকারীর একটি শিক্ষণীয় আদব রয়েছে, আর তা হল ইলমের ব্যাপারে চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রে ধীরস্থিরতা অবলম্বন করা। কোনো বিষয়ে রায় দিতে তাড়াহুড়া না করা। গর্ববোধে নিপতিত না হওয়া। উপকারী ইলম অর্জন যাতে সহজ হয় সে ব্যাপারে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া।

তিনি আরেকটি আয়াত উল্লেখ করেন,

[لَوْلا إِذْ سَمِعْتُمُوهُ ظَنَّ الْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بِأَنفُسِهِمْ خَيْراً وَقَالُوا هَذَا إِفْكٌ مُبِينٌ] النور: ১২

{যখন তোমরা এটা শুনলে তখন কেন মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা তাদের নিজেদের সম্পর্কে ভালো ধারণা পোষণ করল না এবং বলল না যে, ‘এটাতো সুস্পষ্ট অপবাদ?’}

এ আয়াত উল্লেখপূর্বক তিনি বলেন, এখানে আল্লাহ তাআলা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন যে, যখন মুমিনরা অন্যান্য মুমিন ভাইদের চরিত্রহননকারী কোনো খারাপ সংবাদ শুনবে তখন তাদের ইমান ও প্রকাশ্য অবস্থা সম্পর্কে যা জানা আছে তার প্রতি নজর দেবে। সমালোচকদের কথায় কান দেবে না। বরং বিরাজমান মূল বিষয়কে ভিত্তি হিসেবে ধরবে, সমালোচকদের কথা বিশ্বাস না করে তা বরং প্রত্যাখ্যান করবে।

- ভেবে -চিন্তে মন্তব্য করা

এ ক্ষেত্রে জ্ঞানী ব্যক্তির উচিত হবে সকল বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকা। জানা থাকলেই সবকিছু বলে দিতে হবে, কথা এমন নয়। বরং ইসলাম ও মুসলমানের স্বার্থ বিবেচনায় রেখে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু বলা। ছোট বড় সকল বিষয়ে মন্তব্য করা সমুচিন বলে মনে করি না। ঘটে যাওয়া সকল বিষয়েই মন্তব্য করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কারণ মন্তব্যকারী হয়ত বিষয়টি পরিপূর্ণভাবে আত্মস্থ করে নি। এমনও হতে পারে যে অবস্থা নিরুপনে সে ভুল করছে। তাই ধীরস্থিরতা খুবই জরুরি। আরবিতে একটি প্রবাদ আছে, ‘ তাড়াহুড়াকারীর পাথেয় হল ‘ভুল’।

এর বিপরীতে যে ব্যক্তি ভেবে-চিন্তে মন্তব্য করবে, বিবেকের স্বচ্ছতা তাকে সহায়তা দেবে। বক্ষ্যমাণ অভিমতটি তার মস্তিষ্কে পরিপক্কতা পাবে, ভুল কম হবে। বরং এটা হেকমত ও প্রজ্ঞার বিরুদ্ধে যে মানুষ তার জানা সববিষয় সম্পর্কেই মন্তব্য করে চলবে। চিন্তা-ভাবনার আশ্রয় নেয়া সত্ত্বেও, অথবা অভিমত সঠিক হওয়া সত্ত্বেও, সকল বিষয়ে মন্তব্য করা উচিত বলে মনে করি না। মানুষের উচিত কিছু অভিমত সঞ্চয় করে রাখা। তবে যদি হেকমত ও মাসলেহাত দাবি করে, অথবা পরিস্থিতির তাকাযা হয় তবে অভিমত ব্যক্ত করা চলে। যে বিষয়ে মন্তব্য করা হচ্ছে তা যদি বড়দের সাথে সম্পৃক্ত হয় তবে তো কেবল পরামর্শের আকারে ব্যক্ত করা বাঞ্ছিনীয়। আরবিতে একটি কবিতা আছে যার অর্থ, ‘কথা বললে মেপে বল; কারণ কথা, বুদ্ধি অথবা দোষ উন্মুক্ত করে দেয়’।

وزن الكلام إذا نطقت فإنما يبدي العقولَ أو العيوبَ المنطقُ

ইবনে হিব্বান বলেছেন, ধীরস্থিরতা অবলম্বনকারীকে কেউ পেছনে ফেলতে পারে না। আর তাড়াহুড়াকারী অন্যদের নাগাল পায় না। একইরূপে যে চুপ থাকে তাকে খুব কমই লজ্জিত হতে হয়, আর যে বলে, সে কমই নিরাপদে থাকে।

তাড়াহুড়াকারী জানার পূর্বেই বলে ফেলে, বোঝার পূর্বে জবাব দেয়, অভিজ্ঞতা লাভের পূর্বেই প্রশংসকীর্তনে মত্ত হয়, প্রশংসা করার পর আবার তিরস্কারও করে, চিন্তা করার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে, আর বদ্ধপরিকর হওয়ার পূর্বেই চলতে শুরু করে।

তাড়াহুড়াকারীর সংগী হল লজ্জা। নিরাপদ থাকার বিষয়টি তাত্থেকে দূরে অবস্থান নেয়। আর আরবরা তাড়াহুড়াকে সকল লজ্জার মা বা উৎস বলে আখ্যায়িত করেছেন।

উমর ইবনে হাবীব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘বলা হত: এমন কোনো তাড়াহুড়াকারী পাওয়া যাবে না যে প্রশংসিত, এমন কোনো রাগী ব্যক্তি পাওয়া যাবে না যে খুশি। এমন কোনো স্বাধীন ব্যক্তি পাওয়া যাবে না যে লোভী। এমন কোনো বদান্য ব্যক্তি পাওয়া যাবে না যে হিংসুটে। এমন কোনো খাদক পাওয়া যবে না যে ধনী। এমন কোনো বিরক্তিপ্রকাশক ব্যক্তি পাওয়া যাবে না যার বন্ধুবান্ধব আছে।

একারণেই যারা প্রজ্ঞাবান তারা ধীরস্থিরতা অবলম্বন করার ব্যাপারে বারবার উপদেশ দিয়েছেন। বিশেষ করে যখন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করতে যাওয়া হবে তখন। মুতানব্বি বলেছেন,‘ অভিমত, তার অবস্থান তো বাহাদুরের বাহাদুরি প্রকাশের পূর্বে, আর বাহাদুরি, সে তো দ্বিতীয় স্থলে। যদি এ দুটি কোনো শক্তিমান ব্যক্তির বেলায় একসাথ হয় তবে তো সে সকল ক্ষেত্রেই চলে যাবে শীর্ষে।’ মুতান্নাবি আরো বলেন,‘ ব্যক্তিতে বিরাজিত প্রতিটি বাহাদুরিই যথেষ্ট, তবে প্রজ্ঞাপূর্ণ ব্যক্তির বাহাদুরিই সর্বোচ্চ।

- উপস্থাপনে ভারসাম্য রক্ষা

বুদ্ধিমানের উচিত উপস্থাপনে ভারসাম্য রক্ষা করা, অতিরঞ্জন থেকে বেঁচে থাকা। ছোটকে বড় করে না বলা। কেননা অতিরঞ্জন ও তিলকে তাল করে বলার মাঝে বাস্তবতা হারিয়ে যায়। একটি আরবি প্রবাদে আছে, ‘ উত্তমব্যক্তি, মধ্যমপন্থা অবলম্বনকারী ব্যক্তি।’

১০- আল্লাহ আপনাকে দেখছেন এ বিশ্বাস হৃদয়ে জাগ্রত রাখা।

ইন্টারনেটের ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে বাঁচার উপায় হল আল্লাহ আপনাকে অবশ্যই দেখছেন এ বিশ্বাস হৃদয়ে জাগ্রত রাখা। কবি বলেন, ‘ আমার এ চোখ ঐ যুবকের চাইতে অধিক সুন্দর কাউকে দেখি নি যে নিভৃতে আল্লাহর মাকামকে ভয় করে।’ তাই বুদ্ধিমানের উচিত এ বিষয়টি খুবই গুরুত্বসহ নেয়া। সবসময় এ কথা মনে রাখা যে, সকল গায়েব-অদৃশ্য আল্লাহর কাছে দৃশ্যমান। অবস্থা যদি এই হয় তাহলে ব্যক্তির পক্ষে আল্লাহকে সমধিক হালকা দ্রষ্টা হিসেবে সাব্যস্ত করা কি করে সম্ভব?! এটা অনুধাবন করা উচিত যে, যে ব্যক্তি কোনো কিছু গোপন করবে আল্লাহ তাকে ঐ বিষয়ের পোশাক পরিয়ে দিবেন, যে ব্যক্তি কোনো কিছু গোপন করল, চাই তা ভাল হোক বা মন্দ, আল্লাহ তা প্রকাশ করবেন। আমল যে ধরনের হবে, প্রতিদানও সে অনুপাতেই হবে। ইরশাদ হয়েছে, {যে মন্দ কাজ করবে তাকে তার প্রতিফল দেয়া হবে।}[ সূরা আন নিসা:১২৩]

এ ব্যাপারে এবার আমি আপনাকে কিছু আলোকিত বাক্য শুনাব, ‘ আবু হাযেম সালমা ইবনে দিনার র. বলেছেন, ‘ যখন কোনো ব্যক্তি তার মাঝে ও আল্লাহর মাঝে সম্পর্ক দুরস্ত করে নেয়, তখন আল্লাহও তার মাঝে ও মানুষের মাঝে সম্পর্ককে ভালো করে দেন, এর বিপরীতে যখন কোনো ব্যক্তি তার মাঝে ও আল্লাহর মাঝে সম্পর্ককে নষ্ট করে দেয়, আল্লাহও তখন তার মাঝে ও মানুষের মাঝে সম্পর্ককে নষ্ট করে দেন। আর নিশ্চয়ই একজনের চেহারার তুষ্টি অনুসন্ধান সকলের তুষ্টি অনুসন্ধানের তুলনায় সহজ। এর বিপরীতে যদি আপনার ও আল্লাহর মাঝখানকার সম্পর্ক বিগড়ে দেন তবে সবার সাথেই সম্পর্ক বিগড়ে দিলেন। সবাইকেই রাগিয়ে তুললেন।

মু’তামার ইবনে সুলাইমান বলেছেন, ‘ কোনো ব্যক্তি যদি সংগোপনে কোনো পাপ করে তবে সে তার লাঞ্ছনা মাথায় নিয়েই সকাল করে’।

ইবনুল জাওযি র. বলেন,‘ আল্লাহার ব্যাপারে আপনি দলিল তালাশ করেছেন, অতঃপর পৃথিবীতে যত ধূলিকণা রয়েছে তার থেকেও অধিক পেয়েছেন, আল্লাহর আজব বিষয়ের মধ্যে আপনি দেখেছেন যে, আল্লাহ যাতে সন্তুষ্ট নন মানুষ যদি এমন বিষয় গোপন করে, তাহলে বিলম্বে হলেও আল্লাহ তা প্রকাশ করে দেন। লোকেরা তা নিয়ে কথা বলে। যদিও মানুষ তা দেখে নি।

হয়ত এই পাপকারীকে এমন বিপদে ফেলা হয় যার দ্বারা তার সকল পাপ মানুষের সামনে উন্মোচিত হয়ে যায়। এ যাবৎ সে যত পাপ গোপন করেছে, এ বিষয়টি তার জবাব হয়ে যায়। এটা এ জন্য ঘটে যাতে মানুষ জানতে পারে যে পাপ ও পদস্খলের প্রতিদান দেয়ার অবশ্যই একজন রয়েছেন। আর তিনি এমন এক সত্তা, কোনো পর্দা বা প্রতিবন্ধকতা, তার ক্ষমতাকে রহিত করতে পারে না, যার নিকট কোনো আমলই হারিয়ে যায় না।

অনুরূপভাবে মানুষ পুণ্যের কাজকেও হয়ত গোপন করে, কিন্তু তা প্রকাশ পেয়ে যায়, মানুষ তা নিয়ে কথা বলে, তারা বরং আরো অতিরিক্ত বলে, এমনকী সে ব্যক্তি তাদের কাছে এমন প্রতীয়মান হয় যে সে যেন আদৌ কোনো পাপ করে নি। মানুষ তার ভাল কাজগুলোই উল্লেখ করে। এ রকম এ জন্য ঘটে, যাতে মানুষ বুঝতে পারে যে অবশ্যই একজ প্রতিপালক রয়েছেন যিনি আমলকারীর কোনো আমলকেই বিনষ্ট করেন না।

মানুষের হৃদয় ব্যক্তির অবস্থা জানে, তারা তাকে ভালবাসে অথবা বর্জন করে, তাকে তিরস্কার করে অথবা তার প্রশংসা করে, তার মাঝে ও আল্লাহর মাঝে সম্পর্ক যে পর্যায়ের হয় সে অনুযায়ী এগুলো ঘটে। আল্লাহই যথেষ্ট ব্যক্তির সকল উৎকন্ঠা দূর করার ক্ষেত্রে, সকল অশুভ বিষয় তাত্থেকে উঠিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে।

আর যদি কোনো ব্যক্তি তার মাঝে ও আল্লাহর মাঝে সম্পর্ককে বিগড়ে দেয়, সত্য অনুসরণের বিবেচনা থেকে সরে আসে, তবে তার প্রাপ্য বিষয় উল্টে যাবে। যারা তার প্রশংসা করত তারাই তাকে তিরস্কার করতে শুরু করবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ নিশ্চয় নিভৃতে আল্লাহর সাথে সুসম্পর্ক চর্চার প্রভাব রয়েছে যা প্রকাশ্য দৃষ্টিতে চলে আসে। এমন অনেক মুমিন রয়েছেন যারা নিভৃতে আল্লাহকে সম্মান করেন, অতঃপর সে তার প্রবৃত্তির খায়েশকে ছেড়ে দেয়। কেননা সে আল্লাহর শাস্তিকে ভয় পায়, অথবা তার ছাওয়াবের আশা করে। অথবা আল্লাহকে সম্মান করে তা ছেড়ে দেয়। এ কাজ করে সে যেন সুবাসযুক্ত কাঠ ধুপদানির উপর রেখে দেয়, অতঃপর তা সুগন্ধি ছড়াতে থাকে। মানুষ তা শুঁকে, অবশ্য তাদের জানা থাকে না এ সুগন্ধির উৎস কোথায়।

মানুষ তার প্রবৃত্তির খায়েশ থেকে দূরে যাওয়ার জন্য যতটুকু মুজাহাদ করবে, ততটুকু তার মাঝে ও আল্লাহর মাঝে মহব্বত বাড়বে। বর্জনীয় অথচ লোভ্য-প্রিয় বস্তুকে ছেড়ে থাকার জন্য মানুষ যতটুকু শ্রম দেবে তার সুবাসও তত বাড়বে, আর এ সুবাস দাহ্য কাঠের প্রকৃতি হিসেবে বাড়ে অথবা কমে। অতঃপর আপনি মানুষকে দেখবেন যে ঐ লোকটিকে তারা সম্মান-শ্রদ্ধা করছে, তাদের মুখ থেকে তার প্রশংসা রের হচ্ছে, যদিও তারা জানে না কেন এমন হচ্ছে। তারা তাদের অনুভূতিকে ব্যক্ত করতে অপারগ।

এ সুবাস মৃত্যুর পরও সুগন্ধ ছড়িয়ে যেতে পারে। তবে তা ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ভিন্ন হতে পারে। তাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে যাদেরকে মানুষ দীর্ঘকাল স্মরণ রাখে, অতঃপর ভুলে যায়। আবার এমন লোকও রয়েছে যাদেরকে এক’শ বছর পর্যন্ত লোকেরা স্মরণ রাখে, অতঃপর ভুলে যায়। আবার এমনও ব্যক্তি আছে যাদেরকে অনন্তকাল স্মরণ রাখা হয়।

ঠিক এর উল্টো হল ঐ ব্যক্তি যে সৃষ্টিকুলকে ভয় পায়। যে নিভৃতে আল্লাহকে সম্মান করে না। অতঃপর পাপের সাথে তার স্পকৃক্ততা যতটু থাকে সে অনুপাতেই তাত্থেকে দুর্গন্ধ বের হয়, মানুষের হৃদয় তাকে ঘৃণা করে।

যদি তার পাপ অল্প হয়, মানুষ তার বদনাম করে না বটে, তবে প্রশংসা করে অল্প, হ্যাঁ তার পুণ্যের কারণে মানুষের হৃদয়ে তার সম্মানটুকু বজায় থাকে। আর যদি পাপের সংখ্যা অধিক হয় তাহলে সর্বোচ্চ যা হয় তা হল মানুষ তার ব্যাপারে, প্রশংসা-তিরস্কার কোনোটাই করে না, শুধুই কেবল চুপ থাকে। নিভৃতে যারা পাপ করে তাদের পাপের ফলে দুনিয়া-অখিরাত উভয় জাহানেই কষ্ট-যাতনা বরণ করে নিতে হয়। তাকে যেন বলা হচ্ছে, থাকো, নিজের জন্য তুমি যা পছন্দ করেছ, তাতেই তুমি থাক। অতঃপর সে অনন্তকাল কষ্ট-যাতনাতেই থেকে যায়।

প্রিয় পাঠক, দেখুন, পাপকে প্রাধান্য দিলে পাপ কীভাবে মানুষকে দিকভ্রান্ত করে যাতনার গহ্বরে নিক্ষেপ করে। আবুদ্দারদা রা. বলেন, ‘ নিশ্চয় বান্দা যখন নিভৃতে আল্লাহর অবাধ্য হয়, আল্লাহর মানুষের হৃদয়ে তার ব্যাপারে ঘৃণা ঢেলে দেন, যদিও তারা আঁচ করতে পারে না। তাই আমি যা লিখলাম তা নজর দিয়ে দেখুন, যা উল্লেখ করলাম তা জানুন, আপনারা আপনাদের গোপন ও নিভৃতের মুহূর্তগুলো সম্পর্কে উদাসীন হবেন না; কেননা আমলের নির্ভরতা নিয়তের উপর। আর প্রতিদান দেয়া হয় ইখলাস-ঐকান্তিকতা অনুযায়ী’।

ইমাম ইবনুল জাওযী র. বলেন,‘ যতটুকু আপনারা আল্লাহকে সম্মান করবেন, আল্লাহও আপনাদেরকে ততটুকু সম্মান করবেন। যতটুকু আপনারা আল্লাহর কদর-ইহতেরাম করবেন আল্লাহও আপনাদেরকে ততটুকু কদর ইহতেরাম করবেন।

আল্লাহর কসম খেয়ে বলছি, আমি এমন ব্যক্তি দেখেছি, যারা ইলমচর্চায় জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন, অতঃপর বার্ধক্যে উপনীত হয়েছেন। তবে তিনি সীমালঙ্ঘন করেছেন; ফলে মানুষের কাছে হালকা হয়ে গিয়েছেন। তার বিশাল জ্ঞানভাণ্ডার ও মুজাহাদা থাকা সত্ত্বেও মানুষ তার প্রতি ফিরেও তাকাত না।

আমি দেখেছি যারা যৌবনে ইবাদত-আরাধনায় লিপ্ত থেকেছে, যদিও ত্রুটিবিচ্যুতি ছিল, তবু আল্লাহ তার কদর বাড়িয়ে দিয়েছেন। মানুষের হৃদয়ে তার কদর বসে গেছে, অতঃপর তার মধ্যে যতটুকু খায়ের-ভালাই আছে তার থেকেও অধিক তাকে প্রশংসা করেছে।

আমি এমন ব্যক্তিকেও দেখেছি যে তার সবকিছু ঠিকঠাক পেত যখন সে সত্যপথে চলার ক্ষেত্রে দৃঢ়তা দেখাত, আবার যখন সত্য থেকে হেলে পড়ত, আল্লাহর করুণাও তাত্থেকে দূরে সরে যেত। মানুষের পাপের ক্ষেত্রে আল্লাহর রহমত-করুণা ব্যাপক না হলে উল্লিখিত ব্যক্তিদের মান-ইজ্জত সব হাওয়ায় উড়ে যেত, তবে যা হয় তার অধিকাংশটাই হয় শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে, অথবা শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে কমলতা গ্রহণপূর্বক।

১১- যা উপকারী তা পেশ করায় অংশ নেয়া

ইন্টারনেটের খারাপ দিকগুলো থেকে বেঁচে থাকা যেমন জরুরি, তদ্রূপভাবে মুসলমানের উচিত, বরং বলা যায় আবশ্যক, ইন্টারনেটের ভালো দিকগুলো হতে উপকৃত হওয়া। বিশেষ করে ব্যক্তি যদি ইন্টারনেট বিষয়ে জ্ঞান রাখে অথবা এই ময়দানে বিশেষজ্ঞ হয়ে থাকে। এ ধরনের ব্যক্তির জন্য, উপকারী কন্ট্রিবিউশন, মন্তব্য, বিশ্বস্ত ইসলামি সাইটগুলো মানুষকে দেখিয়ে দেয়া, ইত্যাদির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা জরুরি।

সমাপ্ত

জাফর আল-সাদিক, 8th century
বনু মুসা(Ben Mousa), 9th century
জাফর মুহাম্মাদ ইবনে মুসা ইবনে শাকির
আহমেদ ইবনে মুসা ইবনে শাকির
আল-হাসান ইবনে মুসা ইবনে শাকির
আব্বাস ইবনে ফাইমাস(Armen Firman), 9th century
আল-সাঘানি, 10th century
আবূ সাহল আল-কুহি(Kuhi), 10th century
ইবনে সাহল, 10th century
ইবনে ইউনুস, 10th century
আল-কারাজি, 10th century
ইবনে আল-হাইথাম(Alhacen), 11th century Iraqi scientist, father of optics,[65] pioneer of scientific method[66] and experimental physics,[67] considered the “first scientist”[68]
আবূ রায়হান আল-বিরুনী, 11th century, pioneer of experimental mechanics[69]
ইবনে সিনা, 11th century
আল-খাযিনি, 12th century
ইবনে বাজ্জাহ(Avempace), 12th century
হিবাতাল্লাহ আবুল বরকত আল-বাগদাদি(Nathanel), 12th century
অভিররস, 12th century Andalusian mathematician, philosopher and medical expert
আল-জাযারি, 13th century civil engineer, father of robotics,[6] father of modern engineering[70]
নাসির আল-দ্বীন তুসি, 13th century
কুতুব আল-দ্বীন আল-সিরাজী, 13th century
কামাল আল-দ্বীন আল-ফারসি, 13th century
ইবনে আল-সাতির , 14th century
তাকী আল-দ্বীন মুহাম্মাদ ইবনে মা’রুফ, 16th century
হাযেরফান আহমেদ সিলভি, 17th century
লাগারি হাসান সিলভি17th century
শেখ দ্বীন মাহমুদ, 18th century
টিপু সুলতান, 18th century Indian mechanician
ফজলুর খান, 20th century Bangladeshi mechanician
মাহমুদ হিসাবি, 20th century Iranian physicist
আলী জাভান, 20th century Iranian physicist
বাসার উদ্দীন জুসাফ হাবিবি, 20th century Indonesian aerospace engineer and president
আব্দুল কালাম, Indian aeronautical engineer and nuclear scientist
আব্দুস সালাম, Pakistani theoretical physicist and Nobel Prize winner(1979)
মেহরান কারদার, Iranian theoretical physicist • Cumrun Vafa, Iranian mathematical physicist
কামরুন ভাফা, Iranian mathematical physicist
নিমা আরাকানি হামিদ, American-born Iranian physicist
আব্দুল নাসির তৌফিক, Egyptian-born German particle physicist
মুনির নাঈফাহ, Palestinian-American particle physicis
রিয়াজ উদ্দীন, Pakistani theoretical physicist
আব্দুল কাদির খান, Pakistani nuclear scientist
আলী মোশারফ, Egyptian nuclear physicist
সামিরা মুসা, Egyptian nuclear physicist
                                                                               Source >>>quranwithbiggan.wordpress.com/

ইসলাম ভঙ্গকারী বিষয়(Islam Bhongokari Bishoi)
তৌহিদের গুরুত্ব(Tawheed Er Gurutto)
ঈমান ও ইসলাম-পর্ব ১(Iman o Islam Part-1)
ঈমান ও ইসলাম-পর্ব ২(Iman o Islam Part-2)
সহীহ ওযু ও নামায শিক্ষা(Sahih Oju o Namaz Shikkha)
আল্লাহর পক্ষ থেকে মুমিনের পরীক্ষা(Allahor Pokkho Theke Porikkha)
মাতা-পিতার করণীয়(Mata-Pitar Koronio)
মাতা-পিতার অবাধ্যতা(Mata-Pitar Obaddhota)
জেনার কাছে যেওনা-পর্ব ১(Jenar Kaseo Jeona-Part 1)
জেনার কাছে যেওনা-পর্ব ২(Jenar Kaseo Jeona-Part 2)
আদর্শ নারীর বৈশিষ্ট্য-পর্ব ১(Adorsho Narir Boishishto-Part 1)
আদর্শ পুরুষের বৈশিষ্ট্য-পর্ব ২(Adorsho Purusher Boishishto-Part 2)
পর্দার উপকারীতা-পর্ব ১(Pordar Upokarita-Part 1)
পর্দার উপকারীতা-পর্ব ২(Pordar Upokarita-Part 2)
বিবাহ নবীগনের সুন্নাত-পর্ব ১(Bibaho Nabigoner Sunnat-Part 1)
বিবাহ নবীগনের সুন্নাত-পর্ব ২(Bibaho Nabigoner Sunnat-Part 2)
সুদের পরিনাম(Shuder(Riba) Porinam)

                                                                                    Distributed by QuranerAlo.com


লেখকঃ আবু আমিনা বিলাল ফিলিপস্
অনুবাদঃ আবদ্ আল-আহাদ্
সম্পাদনাঃ শাদমান সাকিব
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের জন্য যিনি তার দ্বীনের পথে মানুষকে আহ্বানকারীদের অশেষ মর্যাদার কথা উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ
ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা কথায় কে উত্তম যে আল্লাহ্‌র দিকে মানুষকে আহ্বান করে, সৎকর্ম করে এবং বলেঃ আমি তো আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত।” (৪১:৩৩)
অতঃপর দরূদ ও সালাম অবতীর্ণ হোক প্রিয় নবী (সা) এর উপর যিনি আমাদের আদর্শ এবং যিনি বলেছেনঃ
যে কেউ কোন ভাল কাজ করলে ভাল কাজে আহ্বানকারী ব্যক্তিও তার সমপরিমাণ পুণ্য লাভ করবে।”
মুসলিমরা জানে আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন তাদেরকে একমাত্র সত্য ধর্ম ইসলামকে তাদের জীবন বিধান হিসেবে দান করে তাদের সম্মানিত করেছেন এবং একই সাথে ইসলামকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব আরোপ করেছেন। আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ
(কোরআন) তোমার ও তোমার সম্প্রদায়ের জন্যে তা সম্মানের বস্তু; তোমাদের অবশ্যই এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে।[৪৩:৪৪]
তারা এটাও জানে যে, যদি তারা তাদের ইসলাম প্রচারের এই দায়িত্বকে পালন করে এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মেনে চলার ক্ষেত্রে অন্যের হেদায়াতের কারণ হয় তাহলে তারা তাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে এমন প্রতিদান প্রাপ্ত হবে যা তারা কল্পনাও করতে পারেনা। এ বিষয়ে আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ
তুমি বলে দাওঃ আল্লাহ্‌র এই দান ও রহমতের (কোরআনের) প্রতি সকলেরই আনন্দিত হওয়া উচিৎ; এটা পার্থিব সম্পদ হতে বহুগুণ উত্তম যা তারা সঞ্চয় করেছে।” [১০:৫৮]
এবং প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা) বলেনঃ
আল্লাহ্‌ যদি কাউকে হেদায়াত দিয়ে পথ দেখান তাহলে এই হেদায়াত পৃথিবীতে যা কিছু আছে তার চেয়েও বেশী মুল্যবান।”
এটা আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের এক সুস্পষ্ট অনুগ্রহ যে তিনি তাঁর দ্বীনকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার অগণিত পথ আমাদের সামনে উন্মোচিত করে দিয়েছেন। প্রত্যেকেই তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে ইসলাম প্রচারে অংশগ্রহণ করে তাদের স্রষ্টার কাছ থেকে পুরস্কার পাওয়ার সুযোগ নিতে পারেন। মানুষকে ইসলামের পথে দা’ওয়াহ্‌ দিতে হবে এমন পদ্ধতিতে যা মানুষের কাছে সবচেয়ে সুবিধাজনক এবং গ্রহণযোগ্য। পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী একজন দা’ঈকে তাঁর দা’ওয়াহ্‌র পদ্ধতিও বদলানো লাগবে। আর ঠিক এই কাজটাই করেছিলেন নবী নূহ্‌ () এবং তাঁর পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণ।
একজন দা’ঈর দায়িত্ব হল মানুষকে ইসলামের পথে ডাকার সবরকম পন্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা। এতে করে দা’ওয়াহ্‌র কাজ করা তার জন্য অনেক সহজ হবে। একজন দা’ঈকে তার নিজ পরিবারের আপনজন থেকে শুরু করে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বাড়ীতে কাজের লোকসহ প্রতিটি মানুষকেই ইসলামের দা’ওয়াহ্‌ দিতে হবে। তাকে জানতে হবে কোথায়, কখন এবং কিভাবে ইসলামের দা’ওয়াহ্‌ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। এক্ষেত্রে তার গুরুত্বপূর্ণ স্থানের তালিকায় থাকবে মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, জেলখানা, পার্ক, সমুদ্র সৈকত, বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র, হাজী ক্যাম্প, আবাসিক হোটেল, এয়ারপোর্ট, বাস টার্মিনাল, কমিউনিটি সেন্টার, শপিং সেন্টার, বাজার এলাকা, অফিস আদালত, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া, খাবার হোটেল-রেস্তরা ইত্যাদি। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেমনঃ পাসপোর্ট অফিস, পোস্ট অফিস, পর্যটন কেন্দ্র, বিভিন্ন তথ্য প্রদানকারী সংস্থা ইত্যাদিও তার ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ক্ষেত্র হতে পারে।
ইসলামের দা’ওয়াহ্‌র কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের মধ্যে পারস্পারিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে একে অন্যের কর্মদক্ষতা, অভিজ্ঞতা ইত্যাদিকে কাজে লাগিয়ে ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র কাজে নিয়োজিত কর্মীরা আরো দক্ষ এবং সৃজনশীল হয়ে উঠবেন। ফলে দা’ওয়াহ্‌ কার্যক্রমকে আরো সফলভাবে এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। পারস্পারিক উৎসাহ উদ্দীপনার মাধ্যমের ইসলামের সত্যবাণীকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার কাজ চালিয়ে যেতে হবে। মানুষকে দা’ওয়াহ্‌ দেয়ার ক্ষেত্রে একজন দা’ঈকে প্রয়োজনীয় সবরকম দা’ওয়াহ্‌ উপকরণকে কাজে লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ইসলাম নিয়ে কাজ করতে আগ্রহীদের নিয়োগ দিয়ে হবে। তাদের সাথে যৌথ উদ্যোগে বিভিন্ন বই-পুস্তক, পত্র-পত্রিকা, লিফলেট, হ্যান্ডবিল ইত্যাদি প্রিন্ট করে সেগুলো বিতরণের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি ইসলামিক সিডি ও ভিসিডির কপি তৈরি করে সেগুলো বন্ধুমহলে এবং চারপাশের মানুষদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।
অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না কিভাবে ইসলামিক দা’ওয়াহ্‌র কাজ শুরু করবেন। অনেকেই আবার অজ্ঞতার ওজুহাতে দেখিয়ে কিছু না করেই দিন পার করে যাচ্ছেন। নিচে আমরা ৮০ টিরও বেশী উপায় সম্বলিত একটি পরামর্শ তালিকা দিচ্ছি। পরামর্শগু লো কাজে লাগিয়ে আপনারা সহজেই ইসলামকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হবেন ইনশাআল্লাহ্‌-

পরিবারে দা’ওয়াহঃ

. পারিবারিক গ্রন্থাগারঃ পরিবারে সকল সদস্যদের বয়স বিবেচনা করে সে অনুযায়ী বাড়ীতে বিভিন্ন ইসলামিক বই-পুস্তক, পত্র-পত্রিকা এবং ইসলামিক বক্তাদের লেকচারের সিডি-ভিসিডির একটি সংগ্রহশালা গড়ে তুলুন। আপনার আত্মীয় স্বজনদের বলুন তারা আপনার বাসা থেকে সেগুলো নিয়ে বাসায় পড়তে।
. ওয়াল পোস্টারঃ বাড়ীতে একটি নির্ধারিত স্থানকে নোটিশ বোর্ডের মত পোস্টার লাগানোর জন্য ব্যবহার করুন। গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক লেকচার, বিভিন্ন প্রোগ্রামের সময়সূচী ইত্যাদি পরিবারের সবাইকে মনে করিয়ে দেয়ার জন্য ওয়াল পোস্টারের স্থানটিকে ব্যবহার করুন।
. পারিবারিক শিক্ষার আসরঃ পরিবারের সবাই মিলে একসাথে বসে কেউ একজন কোন একটি বইথেকে সকলের উদ্দেশ্যে পড়ুন এবং বাকিরা শুনুন।যেমন কিতাবুত তাওহীদ। এক্ষেত্রে একসাথে বসে ইসলামিক লেকচার শুনতে পারেন অথবা কোরআনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আয়াত এবং গুরুত্বপূর্ণ হাদীসগুলোও মুখস্ত করতে পারেন।
. পারিবারিক প্রতিযোগিতাঃ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নানা রকম ইসলামিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করুন যা তাদেরকে ইসলাম মেনে চলার ক্ষেত্রে আরো বেশী অনুপ্রেরণা দেবে। পুরস্কার হিসাবে প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণদের নামসমূহ পারিবারিক সম্মাননা তালিকার শীর্ষে রাখা যেতে পারে। তালিকার শীর্ষে নিজের নাম থাকাটাই তাদের কাছে অনেক বড় পুরস্কার মনে হবে।
.পারিবারিক ম্যাগাজিনঃ বাড়ীতে একটি পারিবারিক ম্যাগাজিন প্রকাশের ব্যবস্থা করুন। এতে পরিবারের বিভিন্ন সদস্যরা ইসলাম বিষয়ক বিভিন্ন আর্টিকেল লিখবে। কুরআনের আলো ওয়েবসাইট থেকেও তারা ইসলাম বিষয়ক বিভিন্ন প্রবন্ধ বা ছবি সংগ্রহ করে এই ম্যাগাজিনে প্রকাশ করতে পারে।
. ইসলামিক সমাজ কল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণঃ সালাত আয়াদের জন্য মসজিদে যাবার সময়, ইসলামিক লেকচার শুনতে যাবার সময় অথবা কোন অসুস্থ কাউকে দেখতে যাবার সময় সাথে আপনারভাই বা সন্তানদের নিয়ে যান। ইসলামি দাওয়াহ্‌র কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন সংগঠনগুলোতেও তাদেরকে আপনার সাথে নিয়ে যান।
. অন্যদের সামনে ভাল কাজঃ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সামনেও কিছু ভাল কাজ করুন যাতে তারা আপনাকে দেখে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, তাদের সামনে সালাত আদায় করুন, কোরআন তেলাওয়াত করুন, গরীব দুঃখীদের দান সাদাকা করুন ইত্যাদি।

মসজিদে দা’ওয়াহঃ

. দেয়াল ম্যাগাজিনে অংশগ্রহণঃ অধিকাংশ মসজিদের পেছনের দিকের দেয়ালে নোটিশ বোর্ড থাকে যা বিভিন্ন ধরনের ঘোষণা, ইসলামিক পোস্টার ইত্যাদি লাগানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এই নোটিশ বোর্ডে গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পোস্ট করতে পারেন অথবা মানুষকে ইসলাম সম্পর্কে সচেতন করে এমন তথ্যমূলক পোস্টার কিনে লাগাতে পারেন। কুরআনের আলো ওয়েবসাইট থেকেও আপনারা প্রবন্ধ প্রিন্ট, করে আপনার এলাকার মসজিদে লাগাতে পারেন।
. মসজিদের সুযোগ সুবিধা এবং অনুষ্ঠানের উন্নয়নঃ মসজিদে দা’ওয়াতের কার্যক্রম এবং অন্যান্য সুযোগসুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মসজিদের পাঠাগার ও হিফয্‌খানার উন্নয়নের কাজে অংশগ্রহন করুন। দান বাক্সের মাধ্যমেও উক্ত কাজে সহায়তা করতে পারেন।
১০. ইসলামিক বই-পুস্তক এবং অডিও/ ভিডিও সিডি/ডিভিডি সরবরাহঃ বিভিন্ন ইসলামিক কল্যাণমূলক সংগঠন থেকে গুরুত্বপূর্ণ বই-পুস্তক, পত্র-পত্রিকা, ইসলামিক লেকচার, প্রামাণ্যচিত্রের অডিও/ভিডিও সিডি/ডিভিডি ইত্যাদি সংগ্রহ করে মসজিদের বিভিন্ন স্থানে রাখুন যাতে মুসল্লিদের দৃষ্টিগোচর হয়। যেমনঃ কোরআনের পাশাপাশি তার একাধিক অনুবাদসহ তাফসীর গ্রন্থগুলো মসজিদের সেলফে রাখা যেতে পারে।
১১. মসজিদে অনুষ্ঠিতব্য আলোচনা অনুষ্ঠান সম্পর্কে লোকজনকে জানানোঃ মসজিদে কখন কোন বিষয়ের উপর লেকচারের আয়োজন করা হয়েছে অথবা কোন সময় কোরআন শিক্ষার ক্লাস অনুষ্ঠিত হচ্ছে ইত্যাদি জানিয়ে মসজিদের নোটিশ বোর্ড কিংবা দরজায় বিজ্ঞাপন দিন।
১২. লেকচারের আয়োজন করাঃ আপনার পরিচিত বিশুদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন আকীদার বক্তাদের লেকচার দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ করে মসজিদে নিয়ে আসুন। এক্ষেত্রে অন্যান্য দা’ওয়াহ্‌ সংস্থাগুলোর সাথে যোগাযোগ করে তাদের কাছ থেকে আথবা কুরআনের আলো ওয়েবসাইট থেকেও ভিডিও লেকচার সংগ্রহ করে, প্রোজেক্টরের মাধ্যমে লোকদের দেখানোর ব্যবস্থা করতে পারেন।
১৩. জুম’আর খুৎবা পর্যালোচনাঃ জুম’আর দিন ইমাম যে খুৎবা দেন তার বিষয়বস্তু নিয়ে লোকজনের সাথে পর্যালোচনা করুন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুৎবার প্রাসঙ্গিকতা বিচার করে তা বাস্তবায়নের জন্য লোকদের উৎসাহিত করুন।
১৪. মসজিদ কমিটিতে অংশগ্রহণঃ ইসলামিক দা’ওয়াহ্‌র পাশাপাশি অন্যান্য কল্যাণমূলক সামাজিক কর্মকাণ্ড নিয়ে কাজ করার জন্য মসজিদ কমিটির কর্মী হিসেবে অংশগ্রহন করুন।
১৫. ইমামের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলুনঃ আপনার মসজিদের ইমামের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলুন। আপনি তাকে Youtubeঅথবা আমাদের ওয়েবসাইটের বিভিন্ন লেকচার তাকে দেখাতে পারেন বা শোনাতে পারেন। Youtubekhalifahklothing, shaykha, quraneralo- এই চ্যানেলগুলোতে অনেক ভালো ইংলিশ/বাংলা লেকচার পাবেন। এই লেকচার গুলো তাদের দেখাতে পারেন। তারা এই লেকচার গুলো নিয়ে জুম্মা তে খুৎবা দিতে পারবেন। (উপরের চ্যানেলগুলো দেখার জন্য নির্দিষ্ট চ্যানেলটির উপর ক্লিক করুন)

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দা’ওয়াহঃ

১৫. সকালের পিটি-প্যারেডঃ বিভিন্ন দা’ওয়াহ্‌ উপকরণ যেমনঃ ইসলামিক বই-পুস্তক, ম্যাগাজিন,লেকচারের অডিও/ ভিডিও সিডি ইত্যাদি প্রস্তুত রাখুন এবং সকালের পিটি প্যারেডে পরিস্থিতি বুঝে কাজে লাগান।
১৬. স্কুলের নোটিশ বোর্ডঃ এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটিজ এর পাশাপাশি বিভিন্ন ইসলামিক লেকচার, সভা-সেমিনার ইত্যাদির বিজ্ঞাপন দেয়ার জন্য আকর্ষণীয় সব পোস্টার তৈরি করে সেগুলো নোটিশ বোর্ডে লাগিয়ে দিতে পারেন।
১৭. নাট্য কর্মকাণ্ডঃ ইসলামিক ভাবধারা এবং ইসলামিক মূল্যবোধকে উজ্জীবিত করে এমন নাটক মঞ্চায়নের ব্যবস্থা করুন।
১৮. বক্তৃতাভাষণঃ স্কুলে ইসলামের বিশেষজ্ঞ বক্তাদের নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করুন। অনুষ্ঠানে ছাত্ররা যাতে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের উপর উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণের সুযোগ পায় সেদিকে খেয়াল রাখুন। এতে করে ছাত্ররা তাদের করা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর গ্রহণযোগ্য উত্তর পেলে ইসলাম তাদের কাছে আরো গ্রহণযোগ্য ও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে।
১৯. বিভিন্ন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানঃ স্কুলের ছাত্র-শিক্ষক এবং কর্মচারীদের নিয়ে বিভিন্ন ইসলামিক এবং শিক্ষামূলক প্রতিযোগিতার আয়োজন করুন। বিজয়ীদের মাঝে ইসলামিক পুরস্কার বিতরণ করুন। প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানগুলোতে দা’ওয়াহ্‌র গুরুত্ব তুলে ধরে বিভিন্ন প্রবন্ধ উপস্থাপন করুন।
২০. ছাত্রদের স্বার্থরক্ষাঃ ছাত্রদের বিভিন্ন বিষয়ে উপদেশ, পরামর্শ, অভিযোগ ইত্যাদি সংগ্রহ করে সেগুলো স্কুল কর্তৃপক্ষের নিকট উপস্থাপন করুন। বিশেষ করে ইসলামের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে তাদের পূর্ণ সমর্থন ও সহায়তা দিন।
২১. ইসলামিক গ্রন্থাগারঃ স্কুলের সাধারন গ্রন্থাগারকে ইসলাম বিষয়ক বই-পুস্তকের একটি সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা হিসেবে গড়ে তুলতে “ইসলামিক স্টাডিজ” বিভাগকে সহায়তা করুন। এখানে ইসলামিক সাহিত্যের পাশাপাশি রাসূল (সা) এর সাহাবীদের (রা) এবং ইসলামের জন্য নিবেদিত প্রাণ মুসলিমদের জীবনচরিতগুলোও যাতে পাওয়া যায় সে ব্যবস্থা করুন।
২২. বিভিন্ন প্রচার- প্রদর্শনীঃ স্কুল কর্তৃপক্ষ আয়োজিত বিভিন্ন বইমেলা, ভিডিও প্রদর্শনী কিংবা বিভিন্ন মাদক বিরোধী প্রচারাভিযানে অংশগ্রহণ করুন।
২৩. ইসলামিক সপ্তাহ উদ্‌যাপনঃ স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করুন যেন তারা বছরে একটি দিন ইসলামিক সপ্তাহ হিসেবে উদ্‌যাপনের অনুমতি দেয়। এমন অনুষ্ঠানগুলোতে নানা রকম ইসলামিক প্রদর্শনীর আয়োজন থাকবে। ইসলাম সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারনা দূর করে এমন স্লোগান খোচিত আকর্ষণীয় পোস্টার, ক্যালেন্ডার, আরবি ভাষা শিক্ষার সফটওয়্যার, কোরআনের অনুবাদ ও ব্যাখ্যা সম্বলিত সফটওয়্যার, কোরআনের তেলাওয়াত, ইসলামিক লেকচার, প্রামান্যচিত্রের সিডি-ভিসিডি ইত্যাদি হবে প্রদর্শনীর প্রধান আকর্ষণ।
২৪. গ্রীষ্ম কালীন ছুটিতে দা’ওয়াহঃ ছুটিতে পড়াশোনার চাপ কম থাকলে সময়টা কাটাতে পারেন বন্ধুমহলে সামনে ইসলামকে তুলে ধরার মাধ্যমে। তাদের সাথে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করুন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে তাদের কি মত তা জেনে নিয়ে ইসলামে এসবের সমাধান কি তা তাদের সাথে শেয়ার করুন।

কর্মক্ষেত্রে দা’ওয়াহঃ

২৫. দা’ওয়াহ্‌ পোস্টারঃ ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের উপর আকর্ষণীয় ও নজরকাড়া পোস্টার তৈরি করে অফিসের নোটিশ বোর্ডে লাগিয়ে দিন। কোথাও কোন ইসলামিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকলে সেটাও বিজ্ঞাপন আকারে নোটিশ বোর্ডে লাগাতে পারেন।
২৬. নিজের বসার টেবিলঃ আপনার অফিসের টেবিলে সবসময় কিছু না কিছু দা’ওয়াহ্‌ উপকরণ রাখুন। যেমনঃ ইসলামিক পুস্তিকা, ম্যাগাজিন, কোরআনের উপদেশ সম্বলিত পেপার ওয়েট ইত্যাদি। এতে করে আপনার সহকর্মীরা থেকে শুরু করে আপনার ক্লায়েন্টসদের সকলের নজরে পড়বে ব্যাপারটি। ফলে তাদের সাথে মুখের কথা খরচ না করেই অনেকখানি দা’ওয়াহ্‌র কাজ হয়ে যাবে। আপনাকে দেখে তারাও দা’ওয়াহ্‌র কাজে উদ্বুদ্ধ হতে পারে।
২৭. ইসলামিক লেকচারের সিডি/ডিভিডি বিতরণঃ সহকর্মীদের চালচলন, কথাবার্তা, বয়স ইত্যাদি বিবেচনা করে তাদের মাঝে গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক লেকচারগুলো বিতরণ করুন। বিশেষ করে এমন
ধরনের লেকচার তাদের কে শুনতে বা দেখতে দিন যেগুলোর বিষয়বস্তু বা শিরোনাম অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং যেগুলো বস্তুবাদী মানব জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে।
২৮. আমন্ত্রণ জানানঃ সহকর্মীদের আমন্ত্রণ করে ইসলামিক আলোচনা অনুষ্ঠান এবং সভা-সেমিনারে নিয়ে যান। তাদেরকে বিভিন্ন ইসলামিক দা’ওয়াহ্‌ সংগঠনগুলোতেও সাথে করে নিয়ে যান।
২৯. জামা’য়াতে সালাত আদায় করুনঃ সহকর্মীদের সাথে নিয়ে অফিসে একসাথে সালাত আদায় করুন অথবা তাদেরকে সাথে নিয়ে পাশের কোন মসজিদেও সালাত আদায়ের জন্য যেতে পারেন।
৩০. ইসলামিক আচার-অনুষ্ঠানঃ বিভিন্ন সভা সমাবেশের আয়োজন করুন এবং ইসলামের দা’ঈদেরকে অনুষ্ঠানগুলোতে আমন্ত্রণ করুন। অনুষ্ঠানে তাদের উপস্থিতি ও বক্তব্য দর্শক-শ্রোতাদের মাঝে ইসলামকে জানার ব্যাপারে আগ্রহ তৈরি করবে।
৩১. উন্মুক্ত আলোচলাঃ দুপুরের খাবার কিংবা চা বিরতির সময়টা খোশগল্পে না কাটিয়ে ইসলামিক আলোচনার উপলক্ষ হতে পারে।
৩২. ইসলামিক উদ্যোগঃ ইসলামিক দা’ওয়াহ্‌র সাথে যারা সক্রিয়ভাবে জড়িত তাদেরকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক উদ্যোগ হাতে নিয়ে সেগুলো বাস্তবায়ন করুন।
৩৩. ইসলামিক দৃষ্টান্তঃ কর্তব্যপালণ এবং কর্মসম্পাদনের ক্ষেত্রে শতভাগ আন্তরিক হউন। আপনার প্রতিটি কর্মই সাধ্যমত করার চেষ্টা করুন এবং অন্যদের চোখে প্রমাণ করুন আপনি যা করেছেন একজন ভাল মুসলিম বলেই তা করেছেন। আর এভাবেই তাদেরকে বোঝান ইসলাম কিভাবে মানুষকে সত্যকার অর্থে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গোড়ে তোলে।

দাওয়াহ্‌র কিছু সাধারন পন্থাঃ

৩৪. দা’ওয়াহ্‌ পোস্টারঃ অত্যন্ত দৃষ্টি-আকর্ষক এবং নান্দনিক সৌন্দর্যের বিভিন্ন দৃশ্যাবলী ব্যবহার করে পোস্টার তৈরি করুন। সামাজিক জীবনের বিভিন্ন বাস্তবিক মুহূর্তের চিত্র তুলে ধরে সেই পরিস্থিতিতে কিভাবে দা’ওয়াহ্‌ দেয়া যায় তা তুলে ধরুন। পোস্টারগুলোতে মানুষের চিন্তা উদ্রেককারী ইসলামিক স্লোগান লিখে দিন এবং সেগুলোকে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে টাঙানোর ব্যবস্থা করুন।
৩৫. ইসলামিক শুভেচ্ছা কার্ডঃ বিভিন্ন শুভেচ্ছাবাণী সম্বলিত কার্ড ছাপিয়ে সেগুলো বিতরণ করতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক দিন কিংবা অনুষ্ঠানের তারিখ দিয়ে কার্ড ছাপিয়ে সেগুলোও বিতরণ করা যেতে পারে। কার্ডগুলোতে মনোরম অক্ষরে ইসলামে নিষিদ্ধ বিষয় যেমনঃ সুদ, ঘুষ, পরচর্চা, প্রতারণা ইত্যাদির কুফল উল্লেখ করুন।
৩৬. দা’ওয়াহ্‌ এ্যালবামঃ পরকাল সম্পর্কে মানুষের মনে ভীতি সঞ্চারকারী এবং তাদের মনে বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারে এমন সব ছবি সংগ্রহে রাখুন। ছবিগুলো আপনাদের দা’ওয়াহ্‌ সংগঠনের দর্শনার্থীদের জন্য ব্যবহার করুন অথবা উপহার হিসেবে সেগুলো তাদেরকে দিতেও পারেন।
৩৭. বিয়ের কার্ডঃ বিয়ের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের ইসলামিক দা’ওয়াহ্‌ পৌঁছে দেয়ার জন্য ইসলামিক দা’ওয়াহ্‌র প্রচারপত্রের উল্টো পিঠ বিয়ের কার্ড হিসেবে ব্যবহার করুন। উদাহরণস্বরূপ, যে এলাকার লোকজন বিয়ের অনুষ্ঠানে অনৈসলামিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয় সে এলাকার লোকজনদের দা’ওয়াহ্‌ দেয়ার জন্য “ইসলামে বিয়ে অনুষ্ঠানের ‘আদাব” শীর্ষক পুস্তিকা বিয়ের কার্ড হিসেবে ব্যবহার করুন।
৩৮. টাইপিং এবং রিভিশনঃ হয়ত কোন কাউকে ইসলামের দা’ওয়াহ্‌ দিতে চাচ্ছেন কিন্তু সরাসরি কিছু বললে কাজ হবে না। সেক্ষেত্রে যা করতে পারেন তা হল, তাকে দিয়ে ইসলামিক কোন আর্টিকেল লেখান বা লেখা আর্টিকেল তাকে প্রুফ রিডিং এর জন্য দিন। এমনি এমনি হয়ত পড়ত না কিন্তু অনুরোধ করে কাজটি করতে বললে করবে এবং এক্ষেত্রে দুই কাজই হবে। লিখতে গিয়ে বা প্রুফ রিডিং করতে গিয়ে সে মনোযোগ দিয়ে পড়বে এবং ইসলামের দাওয়াহ্‌র কাজও হবে।
৩৯. মোবাইলের মাধ্যমে দাওয়াহঃ আপনার মোবাইল এবং ই-মেইল কন্ট্যাক্ট লিস্টের সকলকে গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক দিন ও অনুষ্ঠানের কথা জানিয়ে এবং মনে করিয়ে দিয়ে মেসেজ পাঠান। ইসলামে দা’ওয়াহ্‌র গুরুত্ব উল্লেখ করে সংক্ষিপ্ত আর্টিকেল লিখে তাদের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিন। আমাদের ওয়েবসাইটের সব আর্টিকেল ইমেইল করে পাঠাতে পারেন।
৪০. ইন্টারনেট দা’ওয়াহঃ বিভিন্ন জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের সাইট যেমনঃ Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে ইসলামি প্রবন্ধ, বই, অডিও/ভিডিও লেকচার শেয়ার করুন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।। ইন্টারনেটে এমন অসংখ্য চ্যাট রুম/ব্লগ আছে যেগুলোতে ইসলামের কুৎসা রটনা করা হচ্ছে, ইসলামের নামে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এমন চ্যাট রুম/ ওয়েবসাইট গুলোতে আলোচনায় অংশ নিন এবং তাদের মিথ্যাচারকে খণ্ডন করুন।
৪১. গণমাধ্যমে দা’ওয়াহঃ রেডিও এবং টেলিভিশনের জন্য ইসলামিক অনুষ্ঠান নির্মাণ করে সেগুলো সম্প্রচারের ব্যবস্থা করুন। অনুষ্ঠানগুলো সম্প্রচারের আগেই সেগুলোর প্রচার সময় এবং চ্যানেলের নাম উল্লেখ করে ব্যপক প্রচারণা চালান। এক্ষেত্রে পূর্বোল্লিখিত পদ্ধতিতে পোস্টারের মাধ্যমে তা করতে পারেন। ফেইসবুকের সাইডবারেও আকর্ষণীয় ইমেজ ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন। স্থানীয় সংবাদপত্রেও ইসলাম বিষয়ক আর্টিকেল লিখে পাঠান।
৪২. স্টিকারের মাধ্যমে দা’ওয়াহঃ সালাত আদায় করা, পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা, দুস্থদের সহায়তা করা ইত্যাদি বিষয়গুলো মানুষকে মনে করিয়ে দেয় এমন মেসেজ লিখে স্টিকার আকারে সেগুলো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানসহ পাবলিক যানবাহন যেমনঃ বাস, ট্রেন ইত্যাদিতে লাগানোর ব্যবস্থা করুন। স্টিকারে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দো’য়া যেমনঃ বাড়ীর বাইরে যাওয়ার দো’য়া, বাড়ীতে প্রবেশের দো’য়া, টয়লেটে প্রবেশের দো’য়া ইত্যাদি লিখে মানুষের মাঝে বিতরণ করুন যাতে তারা সেগুলো বাড়ীর যথাস্থানে লাগিয়ে রাখতে পারে। আবাসিক হোটেলের মালিকদের অনুমতি নিয়ে হোটেলের রুমগুলোতে সালাতের জন্য কিব্‌লা উল্লেখ করে আকর্ষণীয় স্টিকার লাগাতে পারেন।
৪৩. সালাত এবং সাওমের (রোজা) সময়সূচী প্রচারঃ সালাতের সময়সূচী এবং রমজান মাসে ইফতারের সময়সূচী ছাপিয়ে সেগুলোকে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে লাগানোর ব্যবস্থা করুন। এতে করে মুসল্লীদের এবং যারা রোজা রাখেন তাদের অনেক উপকার হবে। এতে করে সালাতের ব্যাপারে অন্যান্যদেরও স্মরণ করিয়ে দেয়া যাবে।
৪৪. দিনপঞ্জি এবং কর্মসূচীঃ গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক দিন এবং কর্মসূচীর তারিখ ইত্যাদি উল্লেখ করে আকর্ষণীয় দিনপঞ্জি ছাপিয়ে তা প্রকাশের ব্যবস্থা করুন।
৪৫. কলিং কার্ডঃ বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানীর সাথে যোগাযোগ করে ব্যালেন্স রিচার্জ কার্ডের উপরে দা’ওয়াহ্‌ মেসেজ লিখে সেগুলো দোকানে দোকানে সরবরাহ করার ব্যবস্থা করুন।এতে করে ব্যালেন্স রিচার্জ কার্ডের মাধ্যমেও কাস্টোমারদের কাছে ইসলামের দা’ওয়াহ্‌ পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে।
৪৬. পোস্ট কার্ডঃ প্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্য ব্যবহার করে আকর্ষণীয় পোস্ট কার্ড ডিজাইন করুন। পোস্ট কার্ডের উল্টো পিঠে ইসলামিক দা’ওয়াহ্‌ সম্পর্কিত মেসেজ লিখে সেগুলো ছাপানোর ব্যবস্থা করুন। উদাহরণস্বরূপ, কোন খেজুর বাগানের মনোরম দৃশ্যকে ব্যাকগ্রাউন্ড করে তার উপর কোরআনে বর্ণিত “পানি চক্র” সম্পর্কিত আয়াতের উদ্ধৃতি দিতে পারেন।
৪৭. দা’ওয়াহ্‌ ব্রিফকেইসঃ বিশেষ ধরনের একাধিক পকেট বিশিষ্ট ব্রিফকেইস কিনে তা কর্মীদের মধ্যে বিতরণ করুন। একাধিক পকেটওয়ালা এমন ব্রিফকেইস বিভিন্ন ধরনের লিফলেট, পুস্তিকা, গুরুত্বপূর্ণ লেকচারের অডিও-ভিডিও সিডি/ডিভিডি ইত্যাদি বহনের জন্য অত্যন্ত সহায়ক হবে।
৪৮. পত্রিকার চাঁদাঃ উপহার হিসেবে কাউকে ইসলামিক কোন পত্রিকার চাঁদা পরিমাণ টাকা পাঠিয়ে দিতে পারেন অথবা পত্রিকার চাঁদা পরিমাণ টাকা কোন দা’ওয়াহ্‌ সংগঠনকে পাঠিয়ে দিতে পারেন ফলে তারাই পত্রিকাটি গ্রাহকের কাছে উপহার হিসেবে পাঠিয়ে দেবে।
৪৯. পঠিত বই-পুস্তক এবং পত্র-পত্রিকা সংগ্রহঃ পড়া হয়ে গেছে এমন বই-পুস্তক এবং পত্র-পত্রিকা সংগ্রহের একটি উদ্যোগ হাতে নিন। সেগুলো সংগ্রহ করে এমন সব এলাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করুন যেখানকার লোকেরা সেগুলো এখনও পড়ার সুযোগ পাইনি।
৫০. পুস্তিকা-প্রচারপত্রঃ গুরুত্বপূর্ণ বই বা লেকচারে ভিডিও সিডি/ডিভিডি থেকে নির্বাচিত অংশ ছাপিয়ে পুস্তিকা বা প্রচারপত্র আকারে প্রকাশ করুন। বিভিন্ন উপলক্ষে এমনটি করা যেতে পারে। যেমনঃ হজ্ব মৌসুমে, লম্বা ছুটির ভেতরে, প্রবাসী শ্রমিকদের উপলক্ষে, বিয়ের অনুষ্ঠান উপলক্ষে, রমজান মাস কিংবা ঈদ উপলক্ষে।
৫১. বিভিন্ন বিলের রশিদঃ সাধারন ব্যবহার্য বিল যেমনঃ টেলিফোন বিল, পানির বিল, বিদ্যুৎ বিল ইত্যাদি বিলের রশিদের উল্টো পীঠে সংক্ষিপ্ত দা’ওয়াহ্‌ বিষয়ক বিবৃতি এবং কোরআনের উপদেশবাণী লিখে তা গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিন।
৫২. ইসলামিক স্লোগানঃ মানুষের নজর কাড়ে এমন সব আকর্ষণীয় স্লোগান বা বক্তব্য আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যপকভাবে ব্যবহৃত জিনিসপত্র যেমনঃ ক্যালেন্ডার, শপিংব্যাগ, গাড়ির সানস্ক্রীন ইত্যাদিতে লিখা যেতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই শপিংব্যাগ বা গাড়ীর সানস্ক্রীন এর প্রস্তুতকারক কোম্পানির অনুমতি নিতে হবে।
৫৩. খোলা চিঠিঃ বিভিন্ন বয়সের মানুষকে পাঠক হিসেবে কল্পনা করে চিঠি লিখুন। মনে করুন, আপনার চিঠির পাঠক হতে পারে মসজিদের পাশের বাড়ীর কেউ অথবা সেই মসজিদের ইমাম, কিংবা একজন পাবলিক স্পিকার, একজন ডাক্তার, একজন শিক্ষক, একজন ছাত্র, একজন প্রকাশক, একজন বাবা, একজন মা, একজন স্বামী, একজন স্ত্রী, একজন চাকুরিদাতা, একজন ব্যবসায়ী, একজন ভোক্তা/ক্রেতা, একজন নিরাপত্তা প্রহরী, একজন কারাবন্দী কয়েদী অথবা একজন মুসাফির। আপনার পাঠককে উদ্দেশ্য করে তার অনুভূতিতে নাড়া দেয় এমন ভাষায় তাকে ইসলামের পথে ডাকুন।
৫৪. সাধারন প্রতিযোগিতাঃ বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক সাধারন জ্ঞানের প্রতিযোগিতা আয়োজন করুন। এক্ষেত্রে প্রতিযোগীদের বয়সের কথা মাথায় রেখে বয়সের সাথে মানানসই বিভিন্ন ইসলামিক পুরস্কার দেয়ার ব্যবস্থা করুন। পুরুস্কার হিসেবে বিজয়ীদের মধ্যে ইসলামিক বই, লেকচারের সিডি-ভিসিডির সিডি/ডিভিডি ইত্যাদি বিতরণ করুন।
৫৫. সাধারন প্রকাশনাঃ আগে হয়ত ইসলাম মেনে চলত না অথবা বিপথে চলে গিয়েছিল পরে আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন হেদায়াত দান করেছেন এমন মানুষদের গল্প বা তাদের স্বীকারোক্তিমূলক কথাকে গল্প আকারে প্রকাশের ব্যবস্থা করুন। এধরনের প্রকাশনায় নিয়মিত বিভাগ হিসেবে আরো যা থাকতে পারে তা হল কবিতা, নাটক, ছোট গল্প, ভাষাতাত্ত্বিক আলোচনা, বিখ্যাত লোকদের জীবনী, আন্তর্জাতিক রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপট, আধুনিক ব্যবসা-বাণিজ্য এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানসহ বিজ্ঞানের বিভিন্ন অবদান ও আবিস্কারের উপর প্রবন্ধ। প্রকাশনায় এসকল বিভাগ রাখার উদ্দেশ্য হল সেসব পাঠকদের ধরে রাখা যারা হয়ত পুরোপুরি ইসলামিক পত্রিকা পড়তে আগ্রহী নন।
৫৬. বিভিন্ন দা’ওয়াহ্‌ উপকরণ বিতরণঃ ইসালামের দা’ওয়াহ্‌ পৌঁছে দেয়ার কাজে নিয়োজিত সংগঠনগুলো নিয়ম করে সপ্তাহের নির্ধারিত দিনে বাড়ীতে বাড়ীতে গিয়ে দা’ওয়াহ্‌ বিষয়ক পুস্তিকা, ক্রোড়পত্র, লেকচারের সিডি-ভিসিডি ইত্যাদি পৌঁছে দিতে পারে। এমন কাজ স্কুলগুলোতেও করা যেতে পারে।
৫৭. প্রোডাকশন কোম্পানীঃ বড় ধরনের অনুষ্ঠানগুলোর আয়োজন করে থাকে এমন কমিউনিটি সেন্টার বা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে গিয়ে তাদের সাথে যোগাযোগ করুন। তাদের সহযোগিতায় উপস্থিত অতিথিদের মাঝে দা’ওয়াহ্‌ উপকরণ যেমনঃ দা’ওয়াহ্‌ পুস্তিকা, বিখ্যাত বক্তাদের আকর্ষণীয় লেকচারের সিডি-ভিসিডি ইত্যাদি বিতরণের ব্যবস্থা করুন।
৫৮. দা’ওয়াহ্‌র কাজে ব্যবহারের জন্য গাড়ীঃ দা’ওয়াহ্‌র কাজে ব্যবহারের জন্য হালকা দামের খোলা জীপ গাড়ী কিনতে পারেন। গাড়ীতে দা’ওয়াহ্‌ বিষয়ক এবং উৎসাহমূলক শব্দগুচ্ছ বা বাক্য লিখে দিন। জনসমাগম বেশী হয় এমন জায়গায় গাড়ী পার্ক করে লোকজনের মাঝে পূর্বোল্লিখিত দা’ওয়াহ্‌ উপকরণ যেমনঃ দা’ওয়াহ্‌ পুস্তিকা, বিখ্যাত বক্তাদের আকর্ষণীয় লেকচারের সিডি-ভিসিডি ইত্যাদি বিতরণ করুন।
৫৯. বিশালাকৃতির বিল বোর্ডঃ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ন বিজ্ঞাপন বা বিল বোর্ড টাঙিয়ে সেগুলোতে দা’ওয়াহ্‌ মেসেজ এবং ইসলামিক অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দেয়ার ব্যবস্থা করুন। বিশালাকৃতির বিল বোর্ডগুলো সহজেই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হবে। আজকাল রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন প্রসাধনী পণ্যের কুরুচিপূর্ণ বিজ্ঞাপনের জায়গায় ইসলামিক বিল বোর্ড দেখা গেলে তা লোকজনের মাঝে বৈপ্লবিক সাড়া জাগাবে।
৬০. ক্রীড়ানুষ্ঠানের আয়োজনঃ দা’ওয়াহ্‌ সংগঠনগুলো কিশোর এবং যুবকদের অংশগ্রহণে বিভিন্ন শারীয়াহ্‌ সম্মত খেলাধুলার আয়োজন করতে পারে। এমন অনুষ্ঠানগুলোতে বিজয়ীদেরসহ দর্শকদের মাঝে দা’ওয়াহ্‌ সংশ্লিষ্ট উপকরণ পুরস্কার হিসেবে বিতরণ করা যেতে পারে।
৬১. বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানঃ ইসলামের জন্য কাজ করতে আগ্রহী এমন ডাক্তারদের দিয়ে কোন সমমনা প্রাইভেট ক্লিনিকের অধিনে সাধারন মানুষদের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করুন। এক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের মানুষদের সুবিধা দেয়া যেতে পারে। যেমনঃ নতুন মুসলিম হয়েছে অথবা যারা ইসলাম গ্রহনে আগ্রহী ইত্যাদি।
৬২. মহিলাদের জন্য কোর্সের আয়োজনঃ মহিলাদের উদ্দেশ্যে এমন সব কল্যাণধর্মী কোর্সের আয়োজন করুন যে ব্যাপারে তারা স্বভাবতই তারা আগ্রহ বোধ করে। যেমনঃ রান্না-বান্না, গারাস্থ্য অর্থনীতি, সন্তান প্রতিপালন, দাম্পত্য জীবন, গৃহ ব্যবস্থাপনা, গৃহকর্ম ও গৃহকর্মী, দাম্পত্য প্রস্তুতি, স্তন্যদান, শিশুদের রোগবালাই, গৃহ নিরাপত্তা, প্রাথমিক চিকিৎসা ইত্যাদি। এইসব কোর্সের পাঠ্যসূচীর বই-পুস্তকের ভিতর দা’ওয়াহ্‌ বিষয়ক মেসেজ সন্নিবেশ করুন।
৬৩. সাহায্য মেলাঃ তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়ে “চ্যারিটি ফেয়ার”, “চ্যারিটি ফীস্ট” ইত্যাদি নামে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করুন। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা ইসলামিক দা’ওয়াহ্‌ কার্যক্রমকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে তাদের সাধ্যমত আর্থিক অনুদান দেয়ার চেষ্টা করবে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত বক্তারা নারী বিষয়ক ইসলামিক বিষয়ের উপর আলোকপাত করতে পারেন।
৬৪. সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানঃ ইসলামিক স্কলার, দা’ঈ, দা’ওয়াহ্‌ সংগঠন, ইসলামিক পত্রিকা, ইসলামিক ওয়েবসাইট, ইসলামিক সিডি-ভিসিডির দোকান ইত্যাদি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের নিজ নিজ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ সম্মাননা পদক প্রদান উপলক্ষে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করুন। অনুষ্ঠানে ইসলামে দা’ওয়াহ্‌র গুরুত্ব তুলে ধরে উপস্থিত সাধারনের জন্য বক্তব্যের ব্যবস্থা রাখুন। এতে করে সাধারন মানুষ দা’ওয়াহ্‌র গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত হবে।
৬৫. দা’ওয়াহ্‌ নির্দেশিকাঃ দেশে বেড়াতে আসা বিদেশী পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে দা’ওয়াহ্‌ গাইড বা ট্যুরিষ্ট গাইড প্রকাশ করুন। এই গাইডে যেসব বিষয় স্থান পেতে পারে তা হল বিভিন্ন জায়গার ইসলামিক সংগঠন বা দা’ওয়াহ্‌ সংগঠনের ঠিকানা, ইসলামিক গ্রন্থাগার, স্টুডিও, বিখ্যাত মসজিদ, ইসলামিক স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকেশন, বর্তমানে অনুষ্ঠিতব্য দা’ওয়াহ্‌ কনফারেন্স এর সময়সূচী, স্থানীয় ইসলামিক বিশেষজ্ঞদের ঠিকানা ইত্যাদি।
৬৬. ইসলামিক প্রদর্শনীঃ সংস্কৃতি ও পর্যটন বিভাগের সহায়তায় বড় বড় ইসলামিক বুকস্টল এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনকে নিয়ে ইসলামিক প্রদর্শনীর আয়োজন করুন। এমন প্রদর্শনীতে ইসলামিক দা’ওয়াহ্‌ কার্যক্রমের সাথে সমমনা স্কুল-কলেজ এবং বিভিন্ন কোম্পানির স্টল থাকবে যেখানে তারা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর এমন কিছু তুলে ধরবে যা ইসলামিক দা’ওয়াহ্‌র প্রচার-প্রসারে সহায়ক ভুমিকা পালন করবে।
৬৭. দা’ওয়াহ্‌ ওয়েবসাইটঃ দা’ওয়াহ্‌ কার্যক্রম চালানোর জন্য সব রকম চাহিদা মেটাতে পারে এমন দা’ওয়াহ্‌ ওয়েবসাইট নির্মাণ করুন। এই ধরনের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সবরকম দা’ওয়াহ্‌ উপকরণ সরবরাহ করা হবে। ফলে ওয়েবসাইটগুলো ইসলামিক বিশেষজ্ঞ বোর্ড এর ন্যায় ভুমিকা পালন করবে। এখানে দা’ওয়াহ্‌ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আলোচনাও স্থান পাবে। দা’ওয়াহ্‌ বিষয়ক প্রশ্নোত্তর সেকশনও থাকবে।
৬৮. ইফ্‌তার পার্টি আয়োজনঃ দা’ওয়াহ্‌ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে রমজান মাসে ইফ্‌তার পার্টির আয়োজন করুন এবং অন্যান্যদের ইফ্‌তার পার্টিতে অংশগ্রহণ করুন। ইফ্‌তার অনুষ্ঠানে সাওম বা রোজার অসাধারণ উপকারিতা এবং আত্মিক পরিশুদ্ধির জন্য এর তাৎপর্য তুলে ধরে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিন। অথবা সপ্তাহের যে কোন দুটি দিনকে নির্ধারণ করে ঐ দিনগুলোতে অন্যান্য যারা দা’ওয়াহ্‌র কাজ করছে তাদের সাথে মিলিত হয়ে পারস্পারিক মতবিনিময়ের অয়োজন করুন। এ কাজটি সারা বছর ধরেই চালিয়ে যান।
৬৯. হজ্ব এবং ‘উমরাঃ হজ্ব অথবা উমরা করতে যাচ্ছেন এমন মানুষদের এবং বিশেষ করে নতুন মুসলিমদের হজ্ব সফর সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ে যথা সম্ভব সহায়তা করুন। ইসলামের দা’ওয়াহ্‌র কাজে
তাদের স্পৃহাকে উজ্জীবিত রাখার উদ্দেশ্যে হজ্বের পূর্বে, হজ্ব পালনের সময় এবং হজ্ব পরবর্তী কি ধরনের ভুমিকা তাদের হওয়া উচিৎ তা তুলে ধরে হজ্ব গমনেচ্ছু ব্যক্তিদের নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করুন।
৭০. যাতায়াত যানবাহনঃ অনেকেই দূরবর্তী কোন ইসলামিক অনুষ্ঠান, অথবা কোন দা’ওয়াহ্‌ অফিসের কোন কোর্সে যোগদানের জন্য যেতে চান কিন্তু যাতায়াত সুবিধা না থাকায় যেতে পারেন না। এক্ষেত্রে আপনি ইসলামের স্বার্থে নিজের গাড়ীতে করে এবং একটু সময় খরচ করে এমন লোকজনকে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দিন।
৭১. দা’ওয়াহ্‌ বিপণীঃ বিভিন্ন জায়গায় দা’ওয়াহ্‌ বিপণী স্থাপন করুন। এই বিপণীগুলো বিভিন্ন দা’ওয়াহ্‌ উপকরণ সংগ্রহের কাজ করবে। পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে কেউ দা’ওয়াহ্‌ উপকরণ হিসেবে ইসলামিক বই-পুস্তক, সিডি-ভিসিডি’র কপি ইত্যাদি দিতে চাইলে সেগুলো গ্রহন করবে। সংগৃহীত দা’ওয়াহ্‌ উপকরণগুলো নামমাত্র দামে মসজিদ-মাদ্রসা এবং স্কুল-কলেজগুলোতে সরবরাহ করতে হবে।
৭২. দা’ওয়াহ্‌ কার্যালয়ঃ স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন দা’ওয়াহ্‌ কার্যালয় স্থাপন করুন। অন্যান্যদেরও কার্যালয়গুলোতে নিয়ে যান। কার্যালয়গুলোর বিভিন্ন প্রোগ্রামে শরিক হউন। যারা সেখানে ইসলামের দা’ওয়াহ্‌র কাজে নিয়োজিত আছেন তাদের সহায়তা করুন, উৎসাহ দিন।
৭৩. মানুষের জন্য দো’য়া করুনঃ মানুষকে ইসলামের পথে ডাকার অংশ হিসেবে তাদের জন্য বিভিন্ন সময়ে দো’য়া করুন। যেমনঃ হয়ত কাউকে কোন হারাম কাজে লিপ্ত হতে দেখলে তাকে বলুন, “আল্লাহ্‌ আপনাকে জাহান্নামের আগুন থেকে হেফাজত করুন।” অথবা কেউ কোন ভাল কাজ করলে তার জন্য বলুন, আল্লাহ্‌র কাছে দো’য়া করি তিনি যেন আমাদের সবাইকে জান্নাতে তাঁর রাসূলের (সা) কাছাকাছি রাখেন।” অথবা কোন ছাত্রের জন্য দো’য়া করলে বলুন, “আল্লাহ্‌ আপনাকে ইহকাল এবং পরকালের উভয় পরীক্ষায় সাফল্য দান করুন।”
৭৪. ব্যক্তিগত সাক্ষাৎঃ সালাত আদায়ের ব্যপারে উদাসীন বা একবারেই সালাত আদায় করে না এমন লোকদের সাথে সরাসরি দেখা করুন। আযানের সময় হয়ে এসেছে এমন সময় তাদের সাথে দেখা করুন যাতে করে তাদেরকে সাথে নিয়ে মসজিদে যেতে পারেন।
৭৫. ইসলাম গ্রহণের ঘোষণাঃ সদ্য ইসলাম গ্রহণকারী মুসলিমদের জুম’আর মসজিদে নিয়ে আসুন। সালাত শেষে তাদের মুখ থেকেই শুনুন কিভাবে বা কেন তারা ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিল। ইসলামের কোন কোন দিক তাদেরকে বেশী আকর্ষণ করেছে। তাদের কাছ থেকে শোনার পর উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে দা’ওয়াহ্‌র বিভিন্ন উপায় তুলে ধরে কিছু বলুন যা তাদের কাজে আসবে। ইসলাম গ্রহণকারী ব্যক্তি কোন মহিলা হলে তাকে কোন গার্লস স্কুল বা কোন মহিলা সংস্থায় নিয়ে যান এবং সেখানে তার ম্নুখ থেকে ইসলাম গ্রহণের কাহিনী শুনুন । এতে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হবে।
৭৬. সাধারণ যানবাহনঃ আকর্ষণীয় এবংপ্রাসঙ্গিক পোস্টার, স্টিকার,অডিও সিডি/ডিভিডি ইত্যাদি ছাপিয়ে এবং তৈরি করে বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট যানবাহনের মালিক সমিতির কাছে সরবরাহ করুন। এগুলো তারা তাদের বাস, প্রাইভেট কার, মোটর বা ট্যাক্সি ক্যাব ইত্যাদিতে ব্যবহার করবে। মাঝে মাঝে ইসলামিক দা’ওয়াহ্‌র কাজে সহযোগিতার জন্য তাদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করুন।
৭৭. দা’ওয়াহ্‌ বুথঃ শহরের বড় বড় শপিং মল, সুপার মার্কেট এলাকা, নিউমার্কেট এলাকা ইত্যাদি যে স্থানগুলোতে প্রচুর জনসমাগম হয় এমন স্থানগুলোতে দা’ওয়াহ্‌ বুথ স্থাপন করুন। এই দা’ওয়াহ্‌ বুথ বা দা’ওয়াহ্‌ স্টলগুলোর টেবিলে দা’ওয়াহ্‌ বিষয়ক ক্লিপ্স দেখানোর জন্য রাখতে হবে বড় পর্দার টেলিভিশন। সাথে থাকবে নজরকাড়া প্রচ্ছদের সব দা’ওয়াহ্‌ সংশ্লিষ্ট ইসলামিক বই-পুস্তক, দা’ওয়াহ্‌ পত্রিকা, অডিও ক্যাসেট, ভিডিও, সিডি, ভিসিডি ইত্যাদির অনন্য সমাহার যা উপস্থিত দর্শনার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম হবে।
৭৮. টেলিফোন দা’ওয়াহঃ আপনার মোবাইল বা টেলিফোনের ওয়েলকাম টিউন হিসেবে বিভিন্ন দা’ওয়াহ্‌ মেসেজ ব্যবহার করুন। কোন কলার আপনাকে কল করলে তিনি তা শুনতে পাবেন। ফোনকলটি রিসিভ না করা পর্যন্ত কলার মেসেজটি শুনতে থাকবেন। ওয়েলকাম টিউনটি হতে পারে, সম্মানিত কলার, আপনি আজকে সালাত আদায় করেছেন তো? কারণ সালাতই হল একজন কাফির ও মুসলিমের মধ্যে পার্থক্যকারী বিষয়।” এছাড়া মোবাইল এবং টেলিফোনের মাধ্যমে দাওয়াহ্‌ সেন্টার থেকে লোকজন বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর জেনে নিতে পারেন।
৭৯. আরবি ভাষা শিক্ষা কোর্সঃ আরবি ভাষা শিক্ষা কোর্স চালু করুন। এই কোর্সগুলো কথোপকথনমূলক (কনভারসেশনাল) আরবি ভাষা এবং আরবি ব্যকরনের উপর গুরুত্ব দিতে পারে। এক্ষেত্রে আরবি ব্যকরনের জ্ঞান কোরআন বুঝে পড়তে সাহায্য করবে। সরাসরি কোর্সের বদলে ধারণকৃত ক্লাস লেকচার প্রোজেক্টরে দেখানোর মাধ্যমেও আরবি ভাষা শেখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কাজটি নিজের বাড়ী কিংবা কর্মক্ষেত্রে যেখানে সুবিধা করা যেতে পারে।
৮০. ইসলামিক কোর্সঃ তাওহীদ, শির্‌ক, বিদ্‌য়া’হ্‌, হালাল-হারাম, ইসলামে ব্যবসা-বাণিজ্য, ইসলামে দাম্পত্য জীবন, ইসলামে নারী অধিকার, বিয়ে অনুষ্ঠানের ‘আদব ইত্যাদিসহ আকীদাহ্‌গত বিভিন্ন বিষয়ের উপর ইসলামিক কোর্সের আয়োজন করুন। কোর্সগুলো স্থানীয় মসজিদ বা দা’ওয়াহ্‌ সংগঠনে অনুষ্ঠিত হতে পারে। এছাড়া যারা ইসলামের দা’ঈ হিসেবে কাজ করতে চাই তাদের জন্য দা’ওয়াহ্‌ ট্রেনিং কোর্সের আয়োজন করুন।
৮১. দা’ওয়াহ্‌ দিবসঃ উন্মুক্ত দা’ওয়াহ্‌ দিবসের আয়োজন করুন এবং এতে বিভিন্ন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা রাখুন। অনুষ্ঠানে নারী-পুরুষ, দেশী-বিদেশী সকলশ্রেণীর মানুষদের জন্য সুব্যবস্থা রাখুন। দা’ওয়াহ্‌ দিবস অনুষ্ঠানের একমাস আগে থেকেই স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসাসহ সকল জায়গায় মৌখিক ঘোষণা এবং পোস্টারের মাধ্যমে প্রচারনা চালিয়ে তা সকলকে জানিয়ে দিন যাতে করে দা’ওয়াহ্‌ দিবসের আয়োজন মানুষের মুখে মুখে প্রচার লাভ করে।
পরিশেষে, আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের কাছে আমরা এই দো’য়া করি তিনি যেন আমাদের প্রত্যেককে তাঁর দ্বীনের দা’ঈ হিসেবে কবুল করে নেন এবং তাঁর জান্নাতে আমাদেরকে সেই সমস্ত সৎকর্মশীলদের পাশে স্থান দেন যারা তাঁর দ্বীনকে সঠিকভাবে পালন করে গেছেন।
আর্টিকেলটি ডাউনলোড করুন।           


Source>>>>>>quranwithbiggan.WordPress.com
Design by Md.Sahahdad Hossain | Published by ZASJSS - মুসলিম উম্মার ঐক্য |